দ্বিতীয় ভাগ । \సి তেমন অধিক থাকে না । কি সাঁওতাল পরগণার ভিতরে কি মৌরভঞ্জে অর্থাৎ সমস্ত সাওতাল-ভূমির পাশ্বদেশে যে স্ত্রীপুরুষ সাওতাল বলিয়া নাচে উপস্থিত হয়, তাহার পনর আন লোক মিশ্র জাতীয়। অবিমিশ্র সাওতাল নয়। ভূতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা বলেন যে, কোন দেশের উপরিভাগ যেরূপ স্তরে স্তরে বিদ্যস্ত হইয়া থাকে, তাহার হেতুনির্দেশ করিবার নিমিত্ত পূৰ্ব্বগত কোন অদ্ভুত শক্তির কল্পনা করিবার প্রয়োজন নাই, বর্তমান যে সকল শক্তি কাৰ্য্য করিতেছে সেইগুলিই অধিক কাল ব্যাপিয়া কাৰ্য্যকারী হইয়াছে মনে করিলেই প্রকৃত সিদ্ধান্ত স্থির হয় । ভূমিভাগের স্তর সম্বন্ধেও যে কথা, আর ভূমিনিবাসী মনুষ্যদিগের সম্বন্ধেও সেই কথা। যে ব্যাপার আজি হইতেছে দেখিতেছ, তাহাই পূৰ্ব্বাবধি হইয়া আসিয়াছে মনে করিলেই বর্তমান অবস্থা কিরূপে জন্মিল তাহ সহজেই বোধগম্য হয় । আজি দক্ষিণ ভাগলপুরে, সাঁওতাল পরগণায়, মৌরভঞ্জে যাহা হইতেছে দেখিতেছি, পূৰ্ব্বেও তাহাই হইয়া গিয়াছে। পশ্চিমাঞ্চল হইতে আর্য্যসভূত জনগণ আসিয়া এই সকল অঞ্চলের লোকের সহিত মিশিয়া গিয়াছে—ব্রাহ্মণেরাই অপেক্ষাকৃত অল্প পরিমাণে মিশিয়াছেন । বাঙ্গালা ভাষাটী কেমন করিয়া জন্মিল, সেই কথা লইয়া আমাদিগের কোন কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি কিছু মতামত প্রকাশ এবং বাদানুবাদ করিয়াছেন। আমি যে সকল স্থানের নাম করিলাম সেই সকল স্থানের কথ। শুনিলেই একেবারে বাঙ্গালা ভাষার স্বতিকাগারটা দেখা যায়। ঐ সকল স্থানে হিন্দি ভাঙ্গিয়া যায়, দেশীয় কথাও ঠিক থাকে না—একটু দূরে হইতে শুনিলে যেন বাঙ্গালা ভাষার স্বরই শুনিতেছি বলিয়া বোধ হয়। ক্রিয়াপদ গুলিই প্রথমে বাঙ্গালার ধরণে ভাঙ্গে । ভাষা স্বষ্টিও ক্রিয়াপদ লইয়াই হয় । আর একটী ব্যাপারও বাঙ্গালার প্রত্যন্ত দেশ মাত্রেই লক্ষিত হয়। কি কাছাড়া কি খসিয়াদিগের মধ্যে, কি আসামে, কি ছোটনাগপুর প্রদেশে, কি ভাগলপুরে সৰ্ব্বত্রই পশু পক্ষ্যাদি বলি প্রদান দ্বারা কোন না কোন দেবীর পূজা করিবার রীতি প্রচলিত আছে। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দেবীর নাম এবং রূপ ভিন্ন হয় বটে, কিন্তু পূজার পদার্থটি পুংদেবতা নয়, স্ত্রীদেবতা এবং পূজার অতি প্রধান অঙ্গ জীব হনন, এ ছুইটী বিষয়ে সকলেরই মিল আছে। এমন কি ভূটীয় সিকিমী প্রভৃতি পাৰ্ব্বতীয় জাতিরা বৌদ্ধ ধৰ্ম্মগ্রহণ করিয়াও বিবিধ বর্ণের এবং বহু পরিমাণ হস্ত সমন্বিত ৰুদ্ধশক্তি সকল স্বীকার করিয়া থাকে ।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৭৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।