8 e বিবিধ প্রবন্ধ । আর্য্য পণ্ডিত রামায়ণের আখ্যানে আধ্যাত্মিক ভাব সন্নিবিষ্ট করিয়া অর্থাৎ ঐ সকল কাৰ্য্য যে ঈশ্বরের লীলামাত্র, এই ভাব প্রকটন-পূৰ্ব্বক উল্লিখিত ভাতিসংশয়াদির নিরাকরণচেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু ভবভূতি যথাসাধ্য লৌকিক ভাব রক্ষা করিয়াই উত্তরচরিতে রামসীতার পুনর্মিলন সাধনপূৰ্ব্বক লোকের শোকসংশয়াদির উচ্ছেদ করিবার নিমিত্ত প্রয়াস পাইয়াছিলেন বোধ হয়। কৰির মনের এই ভাবটি সপ্তমাঙ্কে রাম এবং লক্ষ্মণের উক্তিতে যেন প্রকাশিত দেখা যায়। সীতা রসাতলগামিনী হইলে রাম বলিলেন— কথং বিলয় এব বৈদেহাঃ সম্পন্নঃ ! হা দেবি, দণ্ডকারণ্যকাসপ্রিয়সখি ! হা চরিত্রদেবতে ! লোকান্তরং পৰ্য্যবসিতাসি ? ইতি মুচ্ছতি । কিন্তু বৈদেহী বিলয় প্রাপ্ত হইলেন । হা দেবি দণ্ডকারণ্যবাসপ্রিয়সথি ! হা দেবচরিত্রে ! তুমি লোকাস্তর প্রস্থান করিলে ? এই বলিয়া মূচ্ছিত হইলেন। লক্ষ্মণ কাতর হইয়া বলিয়া উঠিলেন— ভগবন বাল্মীকে ! পরিত্রায়স্ক পরিত্রায়স্ব এষ কিং তে কাব্যার্থঃ ? ভগবন বাল্মীকে ! পরিত্রাণ করুন পরিত্রাণ করুন। এই কি তোমার কাব্যের প্রয়োজন ? লক্ষ্মণ প্রাণের দায়ে পরিত্রায়স্ব পরিত্রায়স্ব বলিয়া যে চীৎকার করিয়াছিলেন, তাহাই যেন রামায়ণপাঠকসাধারণের হৃদগত শোকের পরিচায়ক, এবং সেই শোক নিবারণের প্রার্থনা। রামায়ণ পাঠকের মনে এই ভাবের উদয় হয় যে, সীতার ন্যায় গৃহিণী ও রামের হ্যায় গৃহীর সংসারের অবস্থ৷ যদি চরমে এইরূপ হয়, তাহ হইলে জগতে সংসারমুখের বাসনা আর কে করিবে ?—সুতরাং তঁহাদের মতে রামায়ণের নির্বহণ কাৰ্য্য অন্তরূপ হইলে ভাল হইত। ভবভূতি লক্ষ্মণের মুখ দিয়া সেই ভাবই ব্যক্ত করিয়াছেন, এবং সেই জন্যই তিনি বাল্মীকির হইয়া রামসীতার পুনর্মিলন সাধনপূৰ্ব্বক সেই শোক নিবারণ ও সেই প্রার্থনার পূরণ করিয়াছেন।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) প্রথম ভাগ.djvu/৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।