পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
১১

 রামচন্দ্রও অনেক নিন্দনীয় কর্ম্ম করিয়াছেন।—যথা বালিবধ। কিন্তু তিনি যে সকল অপরাধে অপরাধী, তন্মধ্যে এই সীতা বিসর্জ্জনাপরাধ সর্ব্বাপেক্ষা গুরুতর। শ্রীরামের চরিত্র কোন্ দোষে কলুষিত করিয়া কবি তাঁহাকে এই অপরাধে অপরাধী করিয়াছেন, তাহার আলোচনা করা যাউক।

 যাঁহারা সাম্রাজ্য শাসনে ব্রতী হয়েন, প্রজারঞ্জন তাঁহাদিগের একটি মহদ্ধর্ম্ম! গ্রীক ও রোমক ইতিবৃত্তে ইহার অনেক উদাহরণ প্রকাশিত আছে। কিন্তু ইহার সীমাও আছে। সেই সীমা অতিক্রম করিলে, ইহা দোষরূপে পরিণত হয়। যে রাজা প্রজার হিতার্থ আপনার অহিত করেন সে রাজার প্রজারঞ্জন প্রবৃত্তি গুণ। ব্রূটস কৃত আত্ম পুত্ত্রের বধ দণ্ডাজ্ঞা, এই গুণের উদাহরণ। যে রাজা প্রজার প্রিয় হইবার জন্য হিতাহিত সকল কার্য্যেই প্রবৃত্ত, সেই রাজার প্রজারঞ্জন প্রবৃত্তি দোষ। নাপোলেয়নদিগের যুদ্ধে প্রবৃত্তি ইহার উদাহরণ। রোবস্পীয় ও দাঁতোকৃত বহু প্রজাবধ উহার নিকৃষ্টতর উদাহরণ।

 ভবভূতির রামচন্দ্র এই প্রজারঞ্জন প্রবৃত্তির বশীভূত হইয়া সীতাকে বিসর্জ্জন করেন। অনেকে স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রজারঞ্জক ছিলেন। কিন্তু বামচন্দ্রের চরিত্রে স্বার্থপরতামাত্র ছিল না। সুতরাং তিনি স্বার্থ জন্য প্রজারঞ্জনে ব্রতী ছিলেন না। প্রজারঞ্জন রাজাদিগের কর্ত্তব্য বলিয়াই, এবং ইক্ষাকু বংশীয়দিগের কুলধর্ম্ম বলিয়াই তাহাতে তাঁহার এতদূর দার্ঢ্য। তিনি অষ্টাবক্রের সমক্ষে পূর্ব্বেই বলিয়াছিলেন,

স্নেহং দয়াং তথাসৌখ্যং যদি বা জানকীমপি,
আরাধনায় লোকস্য, মুঞ্চতো নাস্তি যে ব্যথা।[১]


  1. “প্রজারঞ্জনের অনুরোধে স্নেহ, দয়া, আত্মসুখ, কিম্বা জানকীকে বির্জ্জন করিতে হইলেও আমি কোনরূপ ক্লেশ বোধ করিব না।” নৃসিংহ বাবুর অনুবাদ।