পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
১৩

ভবভূতির রামচন্দ্রও সেইরূপ। তাঁহার চরিত্রে বীর লক্ষণ কিছুই নাই। গাম্ভীর্য্য এবং ধৈর্যের বিশের অভাব। তাঁহার অধীরতা দেখিয়া কখন২ কাপুরুষ বলিয়া ঘৃণা হয়। সীতার অপবাদ শুনিয়া, ভবভূতির রামচন্দ্র যে প্রকার বালিকাসুলভ বিলাপ করিলেন, তাহাই ইহার উদাহরণ স্থল। তিনি শুনিয়াই মূর্চ্ছিত হইলেন। তাহার পর দুর্ম্মুখের কাছে অনেক কাঁদাকাটা করিলেন। অনেক সুদীর্ঘ বক্তৃতা করিলেন। তন্মধ্যে অনেক সকরুণ কথা আছে বটে, কিন্তু এত বাগাড়ম্বরে করুণরসের একটু বিঘ্ন হয়। এত বালিকার মত কাঁদিলে রামচন্দ্রের প্রতি কাপুরুষ বলিয়া ঘৃণা হয়। নিম্নলিখিত উক্তি শুনিলে বা পাঠ করিলে, বোধ হয় যেন কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের কোন অধ্যাপক বা ছাত্রের রচনা—শব্দের বড় ঘটা, কিন্তু অন্তঃশূন্য—)

 “হা দেবি দেবর জনসম্ভবে! হা স্বজন্মানুগ্রহপবিত্রিতবসুন্ধরে! হা নিমিজনকবংশনন্দিনি! হা পাবকবশিষ্ঠারুন্ধতী প্রশস্তশীনশালিনি। হা রামময়জীবিতে! হা মহারণ্যবাসপ্রিয়সখি! হা প্রিয়স্তোকবাদিনি! কথমেবংবিধায়াস্তবায়মীদৃশঃ পরিণামঃ![১]

 এইরূপ রচনা ভবভূতির ন্যায় মহাকবির অযোগ্য—কেবল আধুনিক বিদ্যালঙ্কারদিগের যোগ্য। এইরূপস্থলে রামায়ণের রামচন্দ্র কি করিয়াছেন? কত কাঁদিয়াছেন? কিছুই না।


  1. হা দেবি যজ্ঞভূমিসম্ভবে! হা জন্মগ্রহণ পবিত্রিতবসুন্ধরে! হা নিমি এবং জনকবংশের আনন্দদাত্রি! হা অগ্নি বশিষ্টদেব এবং অরুন্ধতী সদৃশ প্রশংসনীয় চরিতে! হা রামময় জীবিতে! হা মহাবনবাসপ্রিয়সহচরি! হা মধুরভাষিণি! হা মিতবাদিনি! এইরূপ হইয়াও শেষে তোমার অদৃষ্টে এই ঘটিল।
    নৃসিংহ বাবুর অনুবাদ।