পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

निलूलष्त। সিদারচরণ আজ দশ-বারো বছর মালিপোতায় বাস করচে বটে কিন্তু ওর বাড়ী এখানে নয়। সেদিন রায়েদের চণ্ডীমণ্ডপে সিদ্যরচরণ কোথা থেকে এসেচে। তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। বন্ধ ভট্টাচাৰ্য্য মশায় তামাক টানতে টানতে বললেন- “কে, সিদরচরণ ? ওর বাড়ী ছিল কোথায় কেউ জানে না, তবে এখানে আসবার আগে ও খাবরাপোতায় প্রায় দশ বছর ছিল । তার আগে অন্য গাঁয়ে ছিল শনিচি, গাঁয়ে গাঁয়ে বেড়িয়ে বেড়ানোই ওর পেশা।” পেশা হয়তো হতে পারে, কারণ সিদ্যরচরণ গরীব লোক । জীবনে সে ভালো জিনিসের মািখ দেখেনি কখনো। কেউ আপনার লোক ছিল না, সম্প্রতি মালিপোতাতে এসে বিয়ের চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু অজ্ঞােতকুলশীলকে কেউ মেয়ে দেবার আগ্রহ দেখায়নি। মালিপোতার এক বনো মালী আজকাল ওর সঙ্গে একত্ৰ সবামী-স্ত্রীর মতো বাস করে। তার বয়স ওর চেয়ে বেশি ছাড়া কম নয়। দেখতে মোটাসোটা, মিশকালো রং, মাথার চুলে এখনও পাক ধরেনি বটে। তবে ধরবার বেশি দেরিও নেই। বনো বলে এদেশে সেইসব কুলি-মজারের বাৰ্ত্তমান বংশধরদের, যারা একশো বছর আগে নীলকুঠির আমলে রাঁচি, হাজারিবাগ, গিরিডি, মধ্যাপাের প্রভৃতি থেকে এসেছিল। নীলকুঠির আমলে মজরি করতে, এখন তারা বেমালম বাঙালী হয়ে গিয়েছে-ভাষা, ধৰ্ম্ম, আচার-ব্যবহার সব রকমে। পৰব পােরষের বোংগা পজো ভুলে গিয়েচে কতকাল, এখন হরিসংকীৰ্ত্তন করে ঘরে ঘরে, মনসাপজো করে, ষািঠী-পিজো। করে, কালীতলায় মানত করে । এখন যদি এদের জিজ্ঞেস করা যায়-তোরা কোন দেশ থেকে এসেছিলি রে ? তোদের আপনজন কোথায় আছে ? ওরা বলবে-তা কি জানি বাবা । -পশ্চিম থেকে এসেছিলি, না ? -শানেচি বাপ-ঠাকুরদার কাছে। ওদিকের কোথা থেকে আমাদের পাঁচ-ছ’ পরিষের আগে এসে বাস করা হয়। সে সত্য যাগের কথা । সিদরচরণ এ-হেন বনো মালীকে নিয়ে দিব্যি ঘর করতে থাকে। তার নাম কাতু-হয়তো ‘কাত্যায়নীর অপভ্রংশ হবে নামটা। কিন্তু ওর অপভ্ৰংশ নামটাই অন্নপ্রাশনের দিন থেকে পাওয়া-ভাল নাম তাকে কেউ দেয়নি। সিদ্যরচরণ পরের গোর চরিয়ে আর পরের লাঙ্গল চাষে জীবনের চল্লিশটি বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরে বিঘে তিনেক জমি ওটবন্দি বন্দোবস্ত নিলে। তার জমিতে পরের বছর দশ মণ পাট হলো ; সেবার বাইশ টাকা পাটের মণ। পাট বিক্রি করে সেবার এত পেলে সিদ্যরচরণ, অত টাকা একসঙ্গে তার তিন পরিষে কখনো দেখেনি। দশ টাকার নোট বাইশখানা । কাতু বললে-হ্যাঁ গো, দশ হাত ফলন শাড়ীর দাম কত ? -gंकन, र्नािव ?