পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প -ঠিক কথা দিলি ? --দিলাম। এ সময়ে যে শবদেহের উপর বসে আছি, তার দিকে আমার নজর পড়ল । পড়তেই ভয়ে ও বিস্ময়ে আমার সব্বশরীর কেমন হয়ে গেল। শবদেহের সঙ্গে সম্মখের ষোড়শী চেহারার কোন তফাৎ নেই। একই মািখ, একই রং, একই বয়স । বালিকা ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলল-চেয়ে দেখছিস কি ? আমি কথার উত্তর দিলাম না। কিছদ্মক্ষণ থেকে একটা সন্দেহ আমার মনে ঘনিয়ে এসেছিল, সেটা মাখেই প্রকাশ করে বললাম-কে আপনি ? আপনি কি সেই শামশানের পাগলী নাকি ? একটা বিকট বিদ্রুপের হাসিতে রাত্রির অন্ধকার চিড়ে ফেড়ে চৌচির হয়ে গেল । সঙ্গে সঙ্গে মাঠময় নরকঙ্কালগলো হাড়ের হাতে তালি দিতে দিতে একে বোঁকে উদ্দাম নিত্য শার করলে। আর এমনি সেগলো নাচের বেগে ভেঙে পড়তে লাগল। কোন কঙ্কালের হাত খসে গেল, কোনটির মেরদেশড, কোনটির কপালের হাড়, কোনটির বকের পজিরাগালো--তবও তাদের নিত্য সমানেই চলেছে-এদিকে হাড়ের রাশি উচু হয়ে উঠল, আর হাড়ে হাড়ে লেগে কি বীভৎস ঠক ঠক শব্দ ! হঠাৎ আকাশের একপ্রান্ত যেন জড়িয়ে গটিয়ে গেল কাগজের মত, আর সেই ছিদ্রপথে যেন একটা বিকটমত্তি নারী উন্মাদিনীর মতো আলাথাল বেশে নেমে আসছে দেখলাম। সঙ্গে সঙ্গে চার পাশের বনে শেয়ালের দল আবার ডেকে উঠলো, বিশ্রী মড়া-পচার দােগন্ধে চারিদিক পণে হলো। পেছনের আকাশটা আগনের মতো রাঙা মেঘে ছেয়ে গেল, তার নীচেয় চিল, শকুনি উড়ছে সেই গভীর রাত্রে ! শেয়ালের চীৎকার ও নরকঙ্কালের ঠোকাঠকি শব্দ ছাড়া সেই ভয়ানক রাতে বাকি সব জগৎ নিস্তব্ধ, সন্টি নিঝম । আমার গা শিউরে উঠল আতঙ্কে । পিশাচীটা আমার দিকেই যেন ছাটে আসছে। তার আগমনের ভাঁটার মত জলন্ত দা-চোখে ঘণা নিষ্ঠারতা ও বিন্দ্ৰপ মিশ্ৰিত, সে কি ভীষণ ক্লর দন্টি ! পতিগন্ধ, সে শেয়ালের ডাক, সে আগােনরাঙা মেঘের সঙ্গে পিশাচীর সেই দন্টিটা মিলে গিয়েছে একই উদ্দেশ্যে-সকলেই তারা আমায় নিম্ঠারভাবে হত্যা করতে চায় । যে শবটার ওপর বসে আছি-সে। শবটা চীৎকার করে কোঁদে উঠে বললে -আমায় উদ্ধার কর, রোজ রাত্রে এমনি হয়—আমায় খন করে মেরে ফেলেছে ব’লে আমার গতি হয়নি-আমায় উদ্ধার কর । কতকাল আছি। এই শামশানে । ছাপায়ন বছর • • • কাকেই বা বলি ? কেউ দেখে না । ভয়ে দিশেহারা হয়ে আমি আসন ছেড়ে উঠে দৌড় দিলাম। পাবে ফরাসা হয়ে এসেছে ।] বোধ হয় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম । জ্ঞান হলে চেয়ে দেখি আমার সামনেই সেই পাগলী বসে মদ মদ ব্যঙ্গের হাসি হাসছে -“সেই বটতলায় আমি আর পাগলী দ’জনে ।