পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8. বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প পাঁচটা পরনো দিনের আদশের ও কৌতুহলের বস্তুর স্তুপের সঙ্গে ভন্ডুলামামা ও তাঁর বাড়ীও চাপা পড়ে গিয়েচে । তাই ঈষৎ অবজ্ঞামিশ্রিত চোখে সামান্য একটি কৌতুহলের সঙ্গে চেয়ে দেখলাম মাত্ৰ-ভঙুলমামার বয়স পশ্চাশের উপর হবে, টিকিতে একটা মাদলি বাঁধা, গলায় কিসের মালা, কাঁচাপাকা একমাখ দাড়ি। এই সেই ছেলেবেলাকার ভন্ডুলমামা। উদাসীন ভাবে প্রণামটা সেরে ফেললাম । ভণ্ডািলমামা কিন্তু আমার সঙ্গে খাব আলাপ করলেন, একটি গায়ে পড়েই যেন । আমি কোন কলেজে পড়ি, কোন মেসে থাকি, কবে আমার পরীক্ষাইত্যাদি নানা প্রশেন আমায় জবালাতন ক’রে তুললেন। আজকাল তিনি কলকাতায় চাকরি করেন, বাগবাজারে বাসা, তাঁর বড় ছেলেও এবার ম্যাট্রিক দিয়ে ফাস্ট ইয়ারে পড়চে-এ-সব খবরও দিলেন । আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের এখানকার বাড়ীতে ছেলেমেয়ে उँ के ? ভণ্ডািলমামা বললেন-আনিব, শীগগিরই আনিব বাবা। এখনও একট, বাকি আছে, একটা রান্নাঘর আর একটা কয়ো করতে পারলেই সব এনে ফেলি। কলকাতায় বাসভাড়া আর দধের খরচ যোগাতেই • সেইজন্যেই তো খেয়ে না-খেয়ে দেশে বাড়ীটা করলাম, তবে ঐ একটি খানি যা বাকি আছে। --তা ছাড়া চিলেকোঠার ছাদটা এখনও --এইবারেই ভাবচি শ্রাবণ মাসের দিকে ওটাও শেষ করব । বলে কি ! এখনও বাকি ! জ্ঞান হয়ে পর্যন্ত দেখে আসচি ভান্ডােলমামার বাড়ী উঠচে । এ তাজমহল নিম্পমাণের শেষ বেচে থেকে দেখে যেতে 9Пštiti toj i ভণ্ডািলমামা আপন মনেই বলে যেতে লাগলেন--সামান্য চাকরি, ছা-পোষা মানষে বাবা, কাচ্চাবাচ্চা খাইয়ে যা থাকে তাতেই তো বাড়ী হবে ? এখন তো বাসায় বাসায় কাটােচ, আজ যদি চাকরি যায়। তবে ছেলেপলে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব, তাই ভেবে আজ চোন্দ-পনেরো বছর ধ’রে একটি একটা ক'রে বাড়ীটা তুলচি । তা এইবার আর দেরি হবে না, আসচে বছর সব এনে ফেলব। জায়গাটা বড় ভালবাসি। ভণ্ডািলমামা বললেন তো চোন্দ-পনেরো বছর, কিন্তু আমার মনে হলো ভ'ডািলমামার বাড়ী উঠচে আজ থেকে নয়, জীবনের পিছন দিকে ফিরে চেয়ে দেখলে যতদর দাৰ্টি চলে ততকাল ধ’রে "যেন অনাদিকাল, অনাদি যােগ ধরে ভণ্ডািলমামার বাড়ীর ইট একখানির পর আর-একখানি উঠচে-শিশ থেকে কবে বালক হয়েছিলাম, বালক থেকে কিশোর, কৈশোর কেটে গিয়ে এখন প্রথম যৌবনের উন্মেষ, আমার মনে এই অনাদ্যন্ত মহাকাশ বেয়ে কত শত জন্মমােত্যু, সন্টি ও পরিবত্তনের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ভ"ডািলমামার বাড়ী হয়েই চলেচে -- ওর বাঝি আদিও নেই, অন্তও নেই। পরের বছর আবার ভন্ডুলামামার সঙ্গে কলকাতাতেই দেখা। আমি তখন