পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSS বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প আর এককালে না এককালে ছেলেদের তো এসে বসতেই হবে বাড়ীতে । কলকাতার বাসায় বাসায় তো চিরকাল কাটবে না । তারপর মামাদের মখে ভান্ডুলামামার কথা আরও সব জানা গেল। ভন্ডুলমামা একা বিজন বনের মধ্যে নিজের বাড়ীখানায় থাকেন। তাঁর এখনও দািঢ় বিশ বাস তাঁর ছেলেয়া শেষ পয্যন্ত ওই বাড়ীতেই গিয়ে বাস করবে। তিনি এখনও এ-জায়গাটা ভাঙচেন, ওটা গড়চোন, নিজের হাতে দা দিয়ে জঙ্গল সাফ করচেন। ছেলেদের সঙ্গে বনে না-ওই বাড়ীর দরবনই মনান্তর, সত্ৰীও ছেলেদের দিকে । ছেলেরা বােপকে সাহায্য করে না । ভগডুলমামা গাঁয়ে একখানা ছোট মন্দির দোকান করেছিলেন-লোক নেই তার কিনবে কে ? যা দ-একঘর খন্দের জটেছিল-ধার নিয়েই দোকান উঠিয়ে দিলে। এখন ভন্ডুলমামা। এ-গাঁ ও-গাঁ বেড়িয়ে কোনো চাষার বাড়ী থেকে দর-কাঠা চাল, কারার বাড়ী পাঁচটা বেগনএই রকম ক’রে চেয়েচিন্তে এনে বাড়ীতে হাঁড়ি চড়িয়ে দটো ফাটিয়ে খান। তারপর ধীরে ধীরে অনেক বছর কেটে গেল । আমি ক্ৰমে বি-এ পাস করে চাকরিতে ঢািকলাম । মামার বাড়ী আর যাইনে, কারণ সে-গ্রাম আর যাবার যোগ্য নেই । মামার বাড়ীর পাড়ায় গাঙ্গালীরা, রায়েরা, ভড়েরা সব একে একে মরে হেজে গেল, যারা অবশিষ্ট রইল। তারা বিদেশে চাকরি করে, ম্যালেরিয়ার ভয়ে গ্রামের ত্ৰিসীমানা মাড়ায় না। ও-পাড়াতেও তাই জীবন মজমিদারের প্রকাশড দোতলা বাড়ীর ছাদ ভেঙে ভমিসাৎ হয়ে গিয়েচে, শািন্ধ এক দিকের দোতলাসমান দেয়ালটা দাঁড়িয়ে আছে। যে পড়জোর দালানে ছেলেবেলায় কত উৎসব দেখোঁচি, এখন সেখানে বড় বড় জগন্ডমরের গাছ, দিনেই বোধ হয় বাঘ লকিয়ে থাকে। বিখ্যাত রায়দীঘি মজে গিয়েছে, দামে বোঝাই, জল দেখা যায় না, গোর বাছার কচুরীপানার দামের ওপর দিয়ে হেটে দিব্যি পার হতে পারে। সন্ধ্যা-রাতের গ্রাম নিশতি হয়ে যায় । দ-এক ঘর নিরাপায় গহস্থ যারা নিতান্ত অর্থাভাবে এখনও পৈতৃক ভিটেতে ম্যালেরিয়ে-জীণ হাতে সন্ধ্যাদীপ জবালাচে, সন্ধ্যা উত্তীণ হতে-না-হতেই তারা প্ৰদীপ নিবিয়ে শয্যা আশ্রয় করে-তারপর সারারাত ধ’রে চারিধারে শােধ প্রহরে প্রহরে শােগালের রব ও নৈশ-পাখীর ডানা-ঝটাপটি । আমার মামারাও গ্রামের ঘরবাড়ী ছেড়ে শহরে বাসা করেচেন। ছোটমামার ছেলের অন্নপ্রাশন উপলক্ষে সেখানে একবার গিয়েচি ! ব্ৰাহ্মণভোজনের কিছ: আগে একজন শীণকায় বন্ধ একটা পাটলি হাতে বাড়ীতে ঢাকলেন। এক পা ধলো, বগলে একটা ময়লা সাদা-কাপড়-বসানো বাঁশের বাঁটের ছাতা । প্রথমটা চিনতে পারিনি। পরে বকলম ভান্ডািলমামা । এত বড়ো হয়ে পড়েছেন এর মধ্যে !" -শহরে এসে মামাদের নতুন, সভ্য সৌখীন, আলাপী বন্ধ বান্ধব জটোেচ, তাদের পোশাক পরিচ্ছদের ধরনে ও কথাবাস্তার সারে ভাণ্ডািলমামা কেমন ভয় খেয়ে সঙ্কোচের সঙ্গে নিমন্ত্ৰিত ভদ্রলোকদের সতরঞ্চির এককোণে বসলেন। তিনিও নিমন্ত্রিত হয়েই এসেছিলেন বটে, কিন্তু মামারা তখন শহরে বন্ধাদের আদর-অভ্যর্থনায় মহা ব্যস্ত ; তাঁর আগমন কেউ বিশেষ লক্ষ্য করেচে।