পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S(0 বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প আর আমি দিন কুড়ি-বাইশের জন্যে কলকাতার বাইরে যাই, চাকরকে আগাম পর্যন্ত হিমাংশ দিয়ে গেল। গাছে জল দেওয়ার জন্যে, ফিরে এসে দেখা গোল ছ-সাতটা ফ্যান প্যাম শাঁকিয়ে পাখা হয়ে গেছে । সকালে বিকালে হিমাংশ বালতি বালতি জল টানতো একতলা থেকে তোতলায় টবে দেবার জন্যে । গাছ বাড়চে না কেন এর কারণ অন্যাসন্ধান করতে তার উদ্বেগের অন্ত ছিল না। অন্য সব গাছের চেয়ে কিন্তু ওই এরিকা পাম, গাছটার ওপর তার মায়া ছিল বেশি ; তার খাতা ছিল-তাতে লেখা থাকতো। কোন কোন মাসে কত তারিখে গাছটা নতুন ডাল ছাড়লে । গাছটাও হয়ে পড়ল প্রকাশড, মাটির টব বদলে তাকে পিপোকাটা কাঠের টবে বসাতে হলো । মেসের বারান্দা থেকে নামিয়ে একতলায় উঠোনে বসাতে হলো । এ সবে লাগলো। বছর পাঁচ-ছয় । সেবার বাড়ীওয়ালার সঙ্গে বনিব্বনাও না হতে আমাদের মেস ভেঙে গেল । দজনে আর একত্ৰথাকবার সবিধে হলো না, আমি চলে গেলাম। ভবানীপারে। হিমাংশ গিয়ে উঠল। শ্যামবাজারে আর একটা মেসে । একদিন আমায় এসে বিমষ মাখে বল্লে-কি করি জগদীশবাব, ও মেসে আমার টবগলো রাখবার জায়গা হচ্চে না-অন্য অন্য টবের না-হয়। কিনারা করতে পারি, কিন্তু সেই এরিকা পামটো সেখানে রাখা একেবারে অসম্ভব। একটা পরামর্শ দিতে পারেন ? অনেকগলো মেস দেখলাম, অত বড় গাছ রাখার সবিধে কোথাও হয় না। আর টানাটানিব খরচাও বড় বেশি। আমি তাকে কোনো পরামর্শ দিতে পারিনি বা তার পর থেকে আমাব সঙ্গে সেই থেকে আজকের দিনটি ছাড়া আর কোনদিন দেখাও হয়নি । বাকিটা হিমাংশার মাখে। আজই শানেচি । কোনো উপায় না দেখে হিমাংশ শেষে কোন বন্ধর পরামশে ধমতিলার এক নীলামওয়ালার কাছে এরিকা পামের টবটা বেখে দেয় । রোজ একবার করে গিয়ে দেখে আসতো খন্দের পাওয়া গেল কি না । শােধ যে খন্দেরের সন্ধানে যেতো তা নয়, ওটা তার একটা ওজহােত মাত্ৰ-আসলে যেতো গাছটা দেখতে । হিমাংশ, কিন্তু নিজের কাছে সেটা স্বীকার করতে চাই ৩ না। দ’দিন পরে যা পরের হয়ে যাবে তার জন্যে মায়া কিসেব ? তব্যও একদিন যখন গিয়ে দেখলে, গাছটার সে নধর, সতেজ শ্রী যেন মলান হয়ে এসেছে-নীলামওয়ালা গাছে জল দেয়নি, তেমন যত্ন করেনি-সো লাভ জািত মখে দোকানের মালিক একজন ফিরিঙ্গি ছোকরাকে বল্লে-গাছটােয় তেমন তেজ নেই-এই গরমে জল না পেলে, দেখতে ভালো না দেখালে বিক্ৰী হবে কেন ? জল কোথায় আছে- আমি নিজে না-হয়—কারণ দ’পয়সা আসে, আমারই তো टा তার পর থেকে যেন পয়সার জন্যই করচে, এই অছিলায় রোজ বিকেলে নীলামওয়ালার দোকানে গিয়ে গাছে জল দিত । এক একদিন দেখতো দোকানের চাকরেরা আগে থেকেই জল দিয়েচে ।