পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO SR বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প এ-সব সামান্য জিনিসও নাই নাকি ? সশীলা হাসিয়া বলিল-তুমি ফলের গন্ধ দেখে বৰ্ব্বতে পার না ভাই ? ও তো মৌরীর ক্ষেত। কেন আমাদের বাপের বাড়ীর গাঁয়ে কত তো মৌরীর ক্ষেত আছে।--মৌরীর শাক কখনো খাও নি ? কলকাতায় বঝি নেই ? কলিকাতার বউটি বাঝাইয়া দিল যে কলিকাতার অতীত ইতিহাসের সে খবর রাখে না, বত্তমান অবস্থায় সেখানে মৌরীক্ষেত প্রভৃতি থাকা সম্পভব নয়, তবে ভবিষ্যতে কি হয় বলা যায় না । ঘন্টাখানেক পরে যখন নৌকা শিবতলার ঘাটে গিয়া লাগিল, তখন তাহদের দজনের মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ রকমের কথাবাত্ত হইয়া গিয়াছে। সঙ্গিনীর মাখে। স্বামীর আদরের গলপ শানিয়া সাশীলার মনের মধ্যে একটা গোপন ব্যথা জাগিয়া উঠিলা-সেটা সে অনবরত চাপিবার চেন্টা করে, তব কি জানি কেন সেটা ফাঁক পাইলেই মাথা তোলে। প্রথম বিবাহের পর তাহার স্বামীও তো তাহাকে কত আদর করিত, রাত্রে ঘােমাইতে না দিয়া নানা গলেপ ভুলাইয়া জাগাইয়া রাখিত, সশীলা পান খাইতে চাহিত না বলিয়া কত সাধ্যসাধনা করিয়া পান মখে তুলিয়া দিত-সেই স্বামী তাহার কেন এমন হইল ? তাহার বািকটার মধ্যে কেমন হা হা করিয়া উঠিল। দহজনে তাহারা খানিকক্ষণ গাছের ছায়ায় নদীর ধারে এদিক ওদিক বেড়াইল, কি সন্দির দেখায় চারিদিক ৷ ‘ নীল আকাশ সবজি মাঠের উপর যেমন উপড়ে হইয়া আছে। ওমা, পানকৌড়ির ঝকি চরের উপর বসিয়া বসিয়া কেমন ঝিমায় !*** কলিকাতার বউটি বলিল—এস ভাই, আমরা একটা কিছ. পাতাই। কেমন ? সশীলা খশি হইয়া বলিল-খব ভাল ভাই, কি পাতাব বলো - -এক কাজ করি এস-আসতে আসতে নদীর ধারে যে মৌরীফল দেখে এলাম, এস আমরা দজনে মৌরীফল পাতাই । কেমন ? সশীলা আহসাদের সঙ্গে এ প্রস্তাবে সম্পমতি দিল। নদী হইতে অঞ্জলি করিয়া জল তুলিয়া তাহারা মৌরীফল পাতাইল । এমন সময় মোক্ষদা ডাকিলোন-বৌমারা এদিকে এস । তাহারা গিয়া দেখিল গাছতলায় অনেক লোক-সেদিন পজা দিতে অনেক লোক আসিয়াছিল। প্রকাপড় বটগাছ, তাহার তলায় ভাঙ্গা ইটের মন্দির। গাছতলা হইতে একটা দরে এক বাড়ী নানা ঔষধ বিক্রয় করিতেছে। সশীলা ও তাহার সঙ্গিনী সেখানে গিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, রোগ সারা, ছেলে হওয়া হইতে শর, করিয়া সকল রকমের ঔষধই আছে, গর, হরাইলে খাজিয়া বাহির করিবার পয্যন্ত। মেয়েরা সেখানে ভিড় করিয়া দাঁড়াইয়া ঔষধ কিনিতেছে। সশীলার সঙ্গিনী হাসিয়া তাহার হাত ধরিয়া টানিয়া তাহাকে সেখান হইতে মন্দিরের দিকে লইয়া চলিল, বলিল-চালো মৌরীফল, দেখিবে কেমন পীজো হচ্ছে ।