পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্যানভাসার কৃষ্ণলাল 8S সাতটা দশ বারাসত, সাতটা পাঁচিশ নৈহাটি, পৌনে আটটা রানাঘাট প্যাসেঞ্জার, সাড়ে আটটা বনগাঁ লোকাল, আটটা পঞ্চাশ দত্তপকুর, ন’টা দশ কোম্পটনগর লোকাল• • •শর হইয়া গেল দিনের কাজ । বাতের তেল ! বাতের তেল । দত্তপকুরের বাতের তেল ! যতপ্রকার বাত, ফলা, শলানী, কনকননি, মাথা ধরা, পেট বেদনা, ইহার একমাত্রা ব্যবহারে ভদ্রমহোদয়গণ, এই ওষধটি আজ ত্ৰিশ বছর যাবৎ এই লাইনে সংখ্যাতির সহিত চলিতেছে-এই চলিল বেলা বারোটা পয্যন্ত । বারোটা পঞ্চান্ন শান্তিপাের ছাড়িয়া গেলে তবে সকালের কাজ মিটিল। কি জীবন ! কি আনন্দ ! কি পয়সা রোজগার ; কাঁচা পয়সা রোজ আসে, রোজ সন্ধ্যায় উড়িয়া যায়, যে পয়সা আয় করিতে জানে, সে-ই জানে খরচ করিতে, ইহাতে ক্ষোভ কি ? কৃষ্ণলাল আরও মাসখানেক কোনোরকমে কাটাইল । আর চলে না। এ অলস জীবন তাহার অসহ্য, কখনো পা গটাইয়া কৰ্ম্মমবাত্তি অবলম্বন করিয়া এভাবে সে থাকে নাই । বেশিদিন এভাবে থাকিলে সে পাগল হইয়া যাইবে, নয়তো মরিয়া যাইবে । কিন্তু কলিকাতায় গিয়া সে খাইবে কি ? কোনো উপায় তো দেখা যাইতেছে না। ইন্ডিয়ান ড্রাগ সিডিকেটে আর চাকরি হইবার সম্ভাবনা নাই। তবও একবার বস, মহাশয়কে গিয়া ধরিয়া দেখিলে কেমন হয় ? কিছ যদি না জোটে, তবে আহিরিটোলার ঘাটে সেই হাতকাটা তেলের ক্যানভাসার ছোকরার সঙ্গে দেখা করিয়া- তবে ছরি দিয়া নিজের হাত ফালা ফালা করিয়া কাটা-এ বন্ধ বয়সে ‘‘ক্যানভাসারের চাকরির মত সম্পমানের চাকরি, আরামের চাকরি আর নাই, কিন্তু হাত কাটিয়া দেখাইয়া জিনিস বিক্রয় করা ? ওতে মানসম্ভ্রম থাকে না ! এভাবে গ্রামে বসিয়া থাকা জীবন নয় । চিরকাল কাজের মধ্যে থাকিয়া আজ বাঁচিয়া মরিয়া থাকা তাহার পোষাইবে না । গ্রামেও তো হাওয়া খাইয়া জীবন ধারণ করা যায় না-কেহ কেহ তাহাকে সামনের বছর দী-এক বিঘা ধান করিতে পরামর্শ দিল--কেহ বলিল, ডোবার ধারে জমিটা পড়ে আছে কোিট খড়ো, তোমারই পৈতৃক জমি, এই শীতকালে মানকচু, লােগাও ওটাতে, তব, হাটে হাটে কিছ, ঘরে আসবে, সামনের শীতকাল নাগাং-কৃষ্ণলালের হাসি পায় ৷ কলিকাতার রোজগার যে কি ধরনের, সেখানে ক্যানভাসারের কাজে মাসে যে টাকা এক সময় তাহার আয় ছিল, এখানে গোটা বছর ধরিয়া কচু, কুমড়া বেচিয়াও যে সে আয় হওয়া অসম্পভব-এই মািখ অৰবিচিীনেরা তাহা কি করিয়া বঝিবে ? অবশেষে সে একদিন বাক্স বিছানা বাধিয়া কলিকাতায় আসিয়া হাজির হইল । বচিতে হয় তো সে ভাল করিয়াই বাঁচিবে । বিভতি শ্রেষ্ঠ গল্প-৪