পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্রবময়ীর কাশীবাস 6 A --- আমি চলে যাব ? -কেন, তোকে কি বেধে রেখেচি নাকি ? যা --নেব দেবেন না ? দ্রুব ঠাকরণ চুপ করে আপনমনে বড় বড় কয়েকটি ভাতের গ্রাস মাখে পরে নিলেন, বা হাতে ঘাটী নিয়ে ঢাকা ঢাকা করে খানিকটা জল খেয়ে অপেক্ষাকৃত নরম সরে জিজ্ঞেস করলেন-তোর পরনের কাপড় কাচা ? ঐ কলসীটা থেকে আমায় একটি খাবার জল গাড়িয়ে দে দিকি মেয়েটি তাই করলে ৷ দুব ঠাকরণ বল্লেন-অর-চি কেন ? তোর মারা কি ছেলেপিলে হবে নাকি ? --তা তো জানিনে ঠাকমা । —যা নিয়ে যা-তবে একটার বেশি নিবি নো-বাঝলি ? দুব ঠাকরণ খেয়ে উঠে। মাদর পেতে একটি শহয়েচেন, এমন সময় মােখাজে। বাড়ীর বড় ছেলে অতুল এসে বল্লে-ও ঠাকমা শহয়েচেন নাকি ? -হ্যা-কে ? অতুল ? কি ভাই ? --আপনার পিটলি গাছ আছে ? কলকাতা থেকে দেশলাইয়ের কারখানার লোক এসেছে গাঁয়ের পিটলি আর শিমালগাছ কিনতে । আপনার যদি থাকে --বেশ দর দিচ্ছে --না বাপ, আমার নেই। —কেন, আপনার বাড়ীর পেছনের হরি রায়ের দরণে জঙ্গলে তো বেশ বড় বড় পিটলি গাছ আছে -ना, आशि वाल्वा ना। আসলে দ্রব ঠাকরণের গাছপালার ওপর বড় মায়া, সবামীর আমলের যা কিছ যৎসামান্য জমিজমা, তা প্রায়ই জঙ্গলাবত এবং বড় বড় বাজে গাছে ভত্তি ! জবালানি কাঠ হিসাবে বিক্ৰী করলেও এ কয়লার দক্ষমতুল্যতার দিনে দ’ পয়সা পাওয়া যায়, কিন্তু গাছের একটা ডাল কাটতেও তাঁর মায়া। না। খেয়ে কম্পট পাবেন, তবও গাছ বিক্রীর কথা তুলতেও দেবেন না। একজনের শয়োপোকা লাগাতে সে ডুমরপাতা পাড়তে এসেছিল, কারণ ডুমরপাতা দিয়ে শয়ো-লাগা জায়গাটা ঘষলে শায়ো ঝরে যায়, কিন্তু দুব ঠাকরণ তাকে ডুমরপাতা পাড়তে দেন নি। হয়তো এটা অতিরঞ্জিত গলপ মাত্র, তবে এর দ্বারা তাঁর মনের অবস্থা অনেকটা বোঝা যাবে। বৈকালের দিকে দ্রব ঠাকরণ বেশ ভালোই বোধ করলেন। পাড়ার এক প্রান্তে জঙ্গলে-ঘেরা বাড়ী, বড় কেউ এদিকে বেড়াতে আসে না, এক নষ্ঠাকরণ ছাড়া কেউ উকি মেরে বড় একটা দেখে না, দুব ঠাকরণ কিন্তু লোকজন, আড্ডা, মজলিস প্রভৃতি ভালোই বাসেন। কেউ এসে গলপ করে, এটা তাঁর খবই ইচ্ছে-কিন্তু ও-বেলার সেই বালিকাটি ছাড়া বিকেলে আর কেউ এল না। সেও এসেছে নিজের সবাৰ্থে ! -ঠাকুরমা, একটা নেব দেবেন ?