পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՀ বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প পেরেচি কি না । কিন্তু আমার পক্ষে চেনা সম্পভব নয়, আমার বাল্যকালে কে এ গ্রামে করাতের কাজ করতো তা আমার মনে থাকবার কথা নয় । বল্লামতোমার ছেলে আছে ? -কেউ নেই বাবা, কেউ নেই। এক নাতজামাই আছে তো সে মোরে ভাত দেয় না। ওই আমার নাতনীকে রেখে মোর মেয়ে মারা যায় । আমার বঙ্গ কম্পট, ভাত জোটে না। সবদিন। বীজারে যাচ্ছি তিন পয়সার নােন কিনে আনবো-দটো ক’টা চাল যোগাড় করিচি ও-বেলা । বাড়ীকে পকেট থেকে কিছ পয়সা বার করে দিলাম । ব্যাপারটা এখানেই চুকে যাবে-ভেবেছিলাম, কিন্তু তা চুকলো না-উপরন্তু এই বাড়ীকে কেন্দ্র করে আমার জীবনে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা শহর হলো । নিজের জীবনে না ঘটলে বিশ্ববাস করতাম না। এমন ঘটনা। পরের দিন সকালে ঘাম ভেঙে উঠোঁচ, এমন সময় কালকার সেই বাড়ী লাঠি ঠক ঠক করতে এসে হাজির উঠোনে। থাকি এক জ্ঞাতি খড়োর বাড়ী ৷ তিনি বল্লেন-ও হলো জমির করাতীর সন্ত্রী-অনেকদিন মরে গিয়েচে জমির। তোমাদের খাব ছেলেবেলায় । বাড়ী উঠোনে দাঁড়িয়ে ডাকলে-ও বাবাসে বোধ হয় চোখে একটা কম দেখে। ও বয়সে সেটা অবশ্য তেমন আশচয্যই বা কি । বল্লাম-এই যে আমি এখানে । -কাল পয়সা কটা পেয়ে ভাবলাম যাই দিনি বাওনপাড়ার দিকি । কে পয়সা দিলে চিনতিও পারলাম না। বিকেলবেলা চোখে ঠাওর পাইনে । আমার খড়োমশায় বাড়ীকে বঝিয়ে দিলেন আমি কে । সে উঠোনের কাঁঠাল, তলায় বসে আপন মনে খাব খানিকটা বকে উঠে গেল। তার যাবার সময় আরও দ-একটা পয়সা দিলাম । পরদিন কলকাতা চলে গেলাম, ছটি ফরিয়ে গেল। আমার জ্ঞাতি খড়োকে কিছ, টাকা দিয়ে এলাম আসবার সময়ে, আমার জন্যে ছোটখাটাে দেখে একটি খড়ের ঘর তুলে রাখবার জন্যে। কয়েক মাস পরে জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমের ছটিতে আমার সেই নতুন তৈরী খড়ের ঘরখানাতে এসে উঠলাম। কলকাতাতে কমব্যস্ত এই ক’মাসের মধ্যে বাড়ীকে একবার মনেও পড়েনি বা এখানে এসেও মনে হঠাৎ হয় তা হতো না, যদি সে তার পরের দিনই সকালে আমার ঘরের নিচু দাওয়ায় এসে না বসে পড়তো । বল্লাম--কি বাড়ী, ভাল আছো ? ময়লা ছোড়া কাপড়ের প্রান্ত থেকে গোটকতক আম খালে আমার সামনে মাটিতে রেখে বল্লে-আমার কি মরণ আছে রে বাবা ৷ জিজ্ঞেস করলাম-ও আমি কিসের ?