পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গঙ্গাচরণ বড় ছেলেকে বললে-দৌড়ে যা “কােপালী-বাড়ী-বলগে এক্ষুণি আসতে হবে । মার শরীর খারাপ অনঙ্গ-বেী যন্ত্রণায় চীৎকার করতে লাগলো, কখনো ওঠে। কখনো বসে। যুপবদ্ধ আর্ত পশুর মত চীৎকার। গঙ্গাচরণ নিরুপায় অবস্থায় বাইরের দাওয়ায় বসে তামাক টানতে লাগলো । তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েচে, আকাশে পঞ্চমী তিথির এক ফালি চাদও উঠেচে। ঝিঝি ডাকচে লেবুঝোপে। গঙ্গাচরণ আর সহ্য করতে পারচেনা অনঙ্গ-বৌয়ের চীৎকার। ওর চোখে প্ৰায় জল এল। ততক্ষণে বাড়ীর মধ্যে আশপাশের বাড়ীর মেয়েছেলে এসে গিয়েচে । ওদের মধ্যে একজন বর্ষিীয়সীকে ডেকে গঙ্গাচরণ উদভ্ৰান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলে-হঁ্যা দিদিমা, বলি ও আমন করচে কেন ? ঠিক সেই সময় যেন মৃদু গোলমাল উঠলো। একটি শিশু-কণ্ঠের ট্যা-ট্যা কান্না শোনা গেল। বারিকয়েক শাখ বেজে উঠলো । সতীশ কাপালীর মেয়ে বিন্দি বাড়ীর ভেতর থেকে ছুটে এসে বললে-ও দাদাবাবু, বৌদিদির খোকা হয়েচে—এখন সন্দেশ বের করুন আমাদের জন্যেनि řाका গঙ্গাচরণের চোখ বেয়ে এবার সত্যিই ঝর ঝর করে জল পড়লো । তারপর দিন কতক সে কি কষ্ট । প্ৰসূতিকে খাওয়ানোর কি কষ্ট । না। একটু চিনি, না। আটা, না মিছরি। অনঙ্গ-বেী শুয়ে থাকে, নবজাত শিশু ট্যা-ট্যা করে কঁাদে, গঙ্গাচরণ কােপালীদের বড়-বেীকে বলে-ওর খিদে পেয়েচে, মুখে একটু মধু দ্যাও খুড়ি --মধু খেয়ে বমি করেচে। দুবার। মধু পেটে রাখচে না। -তবে কি দেবে খুড়ি, দুধ একটু জাল দিয়ে দেবো ? -অত ছোট ছেলে কি গাইয়ের দুধ খেতে পারে ? আর ইদিকে অতুড়ে পোয়াতি ঘরে, তার খাবার কোনো যোগাড় নেই। হিম হয়ে বসে থাকলে চলবে না। বাবাঠাকুর, এর যোগাড় কর । গ্ৰামে কোনে কিছু মেলে না, হাটেবাজারেও না । আটা, সুজি বা চিনি আনতে হলে যেতে হবে মহকুমা শহরে সাপ্লাই অফিসারের কাছে। গঙ্গাচরণ দু-একজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করলে, মহকুমা শহরেই যেতে হবে। "ל 6 ע