পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষায় থৈ থৈ করছে তার জল, ধারে ধীরে কােশ বনে সবে ফুল ফুটতে শুরু হয়েছে, জলে কলমিলতা জালের মত বিস্তৃত হয়ে আছে। বনখেজুর গাছের মাথায় তেলাকুচে লতার দুলুনি। টুকটুকে লাল তেলাকুচা ফল সবুজ পাতার আড়াল থেকে উকি মারছে। ফিঙে, পাখী ঝুলছে রেলের তারে। রামা গোয়ালা জন-মজুৱা নিয়ে ধান কাটছে তার নিজের জমিতে। ইচুকে দেখে বললে-যাবা কোথায় ? --সনোকপুরের বিলি ধান কাটতি। -কত করে জন্য দোচ্ছ ? --সাত সিকে করে বিঘে । তামাকের আগুন দেব ? --নিয়ে যাও ; ওই বেনা ঝোপের ধারে মালসা আছে । --ভাত খেয়েই চলে আলাম, হাফ জিরুতে পারি নি। তামাক না খেলি কাজে মন বসে ? মালসা থেকে আগুন নিয়ে তামাক খেতে খেতে চলল। ইচু। ইচুর গ্রাম থেকে দু’মাইল দূরে সনেকপুৱেব বিলে দেড-শ দু-শ বিম্বে জমিতে ভাদুই ধান পেকে গাছ শুয়ে পডেছে। যেমন বর্ষা নেমেছে, দু’পাচ দিনে বিদেব জল বেডে পাকা ধান ডুবিয়ে দেবে, তাই এবার মজুরির রেট এদিকে খুব }}বেশি। তার ওপর আছে একবেলা খোরাকি মজুরদের। ইচুর বড় ভাল লাগে আল্লার কথা শুনতে। পায়রাগাছির ফকির এ অঞ্চলের মধ্যে নামজাদা সাধু। একবার ইচু তাকে দেখেছিল। বাল্যকাল থেকে ইচুর ঈশ্বরের দিকে কেমন এক টান। পায়রাগাছির ফকির সে টান আবও বাডিয়ে দেন ওর। ইচু যেন কেমন হয়ে গিয়েছে তার পর থেকে। সংসারে মন দেয় না, মজুরি করে পয়সা রোজগারের দিকে বা খাওয়া-দাওয়ার দিকেও মন নেই। কাস্তে হাতে জমির ধান কাটতে কাটতে মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। অনেকে ওকে তা নিয়ে খেপায়। বলে-ও ইচু, শেষকালে ফকির হবা নাকি গো ? ইচু মুখে কিছু বলে না, চুপ করে থাকে। সে নিতান্ত ভালমানুষ, কারও কোন কথার প্রতিবাদ সে করতে পারে না । মজুরির রেট নিয়ে দরাদরি করতে পারে না বলে অনেকে ওকে ঠকিয়ে কাজ আদায় করে। বিনি। মজুরিতে অনেক সময় খাটিয়ে নেয়। -ও ইচু, আমার বাড়ির চালকুমড়ের মাচাটা তুমি থাকতে নষ্ট হয়ে वांद्व ? SVO9