পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-জান এতে চালান দিলে তোমার ফাঁসি হতে পারে ? -আল্লার ঝদি তাই মার্জি হয়, মোর মনে এতটুকু খেদ থাকবে না দারোগবাবু-তেনার ঝ মজি তাই তিনি করুক। মুই খুশি ছাড়া অখুশি হব না। বুড়ো হাফেজ মণ্ডল এগিয়ে এসে দৃঢ়কণ্ঠে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললে— কাকে কি বলছেন বাবু? আল্লার কথা উঠলি ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ে। অমন লোক এ দিগরে নেই। দারোগাবাবু বললেন—তুমি কাল রাত্রে কোথায় ছিলে ? -ঘরেই শুয়ে ছেলাম। মড়ার মত ঘুম এসেছে চাকি, সনেকপুরের বিলি জন খাটেলাম সারাদিন। ওনারা ডাকলে সকালবেলা, তখন মুই ঘুম ভেঙে উঠি । দারোগাবাবু অভিজ্ঞ লোক, পুলিশের চাকরি অনেকদিন কবছেন। কে সাধুকে বদমাইস চেনেন, ইচুর দ্বারা এ কাজ হয় নি। ওর মুখের দিকে চেয়ে তখনই বিদ্যুতের লেখা বাণীর মত র্তার মনের মধ্যে এ সত্য উদয় হল। সেই সন্ধ্যায় ইচু নামাজ সেরে ভাঙা খালি ঘরে ঢুকতেই ওর প্রাণটা হা হা করে উঠল । --নিমি, ও নিমি, মোরে ভাত এনে দে ! -সৌআপন মনেই ডাকিল। নিমিকে সে কত ভালবাসত, যে যা বলে ওসব সে বিশ্বাস করে না । বিচার করবার সে কেউ নয়। নিমিকে সে ক্ষমা RCC --নিমি, ও নিমি, মোরে ভাত এনে দিলি নে ? পরদিন গ্রামের লোক সকালে উঠে ইচুকে আর তার ঘরে দেখতে পেলে না। সে একবান্ত্রে বাড়ী থেকে বেরিয়ে গিয়েছে কখন। গৃহস্থালীর কলসী, হঁড়িকুড়ি, নারকেলের মালা, দু’একখানা পিতলের ঘটিবাটি সব ফেলে রেখে scs খলসেখালি গ্রামের প্রান্তে নদীতীরে তেঁতুলগাছের তলায় পর্ণকুটিরে একজন ফকির কোথা থেকে এসেছে। সন্ধ্যায় আকাশের নীলপটে মেঘেরা রচনার সঙ্গে সঙ্গে সে খেজুৱচটা বিছিয়ে নদীর ধারে যখন নামাজ তখন লোকে সবিস্ময়ে তার মুখে দেখেছে এক অদ্ভুত আলো, প্রভাতী তারার’ জ্যোৎস্নার মত। এক সন্ধ্যা ভিক্ষাই তার উপজীবিকা। সবাই ওকে মানে, ভক্তি করে। নাম ওর ইচু, ফকির। 38