পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিন-নিয়ে দিদির এই ট্রানশ্লেসানটা হয়েছে কিনা দেখে দিন তো । দিদি বললে আপনাকে দেখাতে• • • সেটা হাতে নিয়ে দেখলাম-বেশী গোটা গোটা মুক্তোর ছাদের লেখাটা বটে। কিন্তু ট্রানশ্লেসানটা বিশেষ উচুদরের নয়। কাজেই যখন বীণা বললে— ধরুন কুডি নম্বর আছে, কত নম্বর দেবেন। আপনি ? তখন একটু আমতা আমতা করে বললাম-নম্বর ? তা এই ধরে, অবিশিষ্ঠ বাংলাটা খুব শক্ত, তা ধরে এই চার কি পাঁচ দিতে পারি • • • --মোটো ? তবেই হয়েছে, দিদি তাহলে এবার ইংরাজিতে ফেল, ফেলতুঃ, ফেলুং-কথাটা শেষ করেই সে মুখে হাতখানা চাপা দিয়ে খিলখিল কবে হেসে উঠলো। আমি একটু অপ্ৰতিভা হয়ে বললাম-না না, ফেল কেন হবেন -আব একটা সোজা দেখে করলেই - এটা বেজায় শক্ত কিনা ? বিকেলে এসে বীণা বললে-দিদি বলে দিলে আপনাকে রোজ রোজ তাব ট্রানশ্লেসান দেখে দিতে হবে-পারবেন তো ? -খুব-খুব-নিয়ে এসো না কাল থেকে । কেন দেখে দেব না ? সেদিন থেকে আমার কাজ হলো বোজ রোজ এক রাশ করে ইংরাজি ও বানানের ভুল সংশোধন করা। বেশ হাতের লেখাটি কিন্তু-খাতার শেষে গোটা গোটা ছাদে আমার নেপথ্যপথবর্তিনী ছাত্রীটির নাম লেখা থাকে-প্ৰতিমা দেবী। কয়েক দিন খুব গুমন্টের পর বৈকালের দিকে সেদিন খুব বৃষ্টি হলো । উকিলবাবুৰ বাড়ীর সামনে একটা বড় বটগাছে নতুন পাতা গজিযেছে, বাবান্দাটাতে বসে সেদিকে চেয়ে আমি আমার দেশের বাড়ীর কথা ভাবছিলাম— কতদিন যাই নি, কাজের খাতিরে বিদেশে বিদেশে বেড়াতে হয়। তবুও যখন নববর্ষা নামে বৃষ্টি-সজল বাতাসে এখান থেকে তিনশো মাইল দূরের সে গ্রামখানির ভিজে মাটির গন্ধ যেন ভাসিয়ে আনে• • • মনে হয়। আমার ছোট ভাই অন্তু হয়তো এতক্ষণ আমাদের উঠোনের বৃষ্টির জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে খেলা করছে।--গোঁসাই কাকাদের বৈঠকখানাতে এতক্ষণ তাসের খুব মজলিস বসেছে - তখন মন বড়ো খারাপ হয়ে যায়, ইচ্ছা হয় চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ী গিয়ে উঠি । উকিলবাবু কয়েক দিন রক্তাধিক্যের অমুখ হওয়ায় বাড়ীর মধ্যেই ছিলেন, কাছারিও যাননি। তিনি ঝড়-বৃষ্টি থামবার পরে বারান্দাতে এসে আমার পাশে একটা আরাম-কেন্দারায় বসে নানা গল্প করতে লাগলেন । বেশ অমায়িক স্বভাবের ভদ্রলোকটি। বললেন-ক-দিন আপনার খোঁজ-খবর করতে পারিনি, S \,