পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দূর থেকে তার বড় ভাল লাগে। প্ৰাচীন অশোক বকুল বট নাগকেশর ও সপ্তপর্ণ তরুশ্রেণীর নিবিড় ছায়ায় উদ্যানটি যেন নিভৃত তপোবনের মত শান্তিপ্ৰদ ও মনোরম। কত পক্ষিকুলের সমাবেশ ও বিচিত্র কলতানে ছায়াবিতানগুলি যেন মুখর। কয়েকদিন সেদিকে সে একাই গ্রীক রথ হাকিয়ে বেডাতে যায়। টাঙাজাতীয় এই গ্ৰীক যানগুলির চলন তক্ষশিলা এবং প্ৰায় সর্বত্র সভ্য সভ্য নগরনগরীতে দেখা যায়। আজকাল । প্ৰিং নেই, বড একটা কাঠের বা লোহার খুরোর ওপর শকটের যতটুকু বসানো, তাতে বড জোর দু'জন লোকের স্থান সকুলান হতে পারে। একদিন সে কি ভেবে প্ৰাচীরের একটি নিম্নস্থান উল্লঙ্ঘন করে উদ্যানের মধ্যে প্ৰবেশ করল । উদ্যান তো নয়, যেন নিবিড় বন । বহু কালের উদ্যান, বড় বড় গাছগুলিতে নিভৃত কোণ ও ছায়া রচনা করেচে। নানাস্থানে-পাষাণৰাধানো বাপীতটে সুন্দর লতাগৃহ, অশোককুঞ্জ, উৎস, যক্ষমূর্তি ইত্যাদি দ্বারা শোভিত নির্জন উদ্যানের মধ্যে কিছুদূরে প্রাচীন দিনের ভারতীয় স্থাপত্যপ্ৰণালীতে নিমিত একটি বিশাল অট্টালিকা বৃক্ষশ্রেণীর মধ্য দিয়ে চোখে পড়ে --কিন্তু সেখানে কেউ বাস কবে বলে মনে হল না । হেলিওডোরাস অ্যাপন মনে পরিভ্রমণ করতে করতে একটা পাষাণবেদীতে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলে --তারপব সেখান থেকে বের হয়ে এসে ব্লথ হাকিয়ে চলে এল । সেই থেকে মাঝে মাঝে উদ্যানবাটিতে যায়- কখনও মধ্যাহ্নে, কখনও সন্ধ্যায়, কখনও একাই জ্যোৎস্নময়ী রাজনীতে। ] বৎসর প্রায় ঘুরে গেল। শীত এল, চলেও গেল। পুরুষপুরে এবার তুষারপাতের সংবাদ পাওয়া গিয়েছে-অতি দুন্দান্ত শীত ছিল এবার। ফাঙ্কনী চতুৰ্দশী তিথির মনোরম জ্যোৎস্নালোকে, অজস্র বিহঙ্গকাকলী ও পুষ্পপৰ্যাপ্তির মধ্যে হেলিওডোরাসের দিনগুলি যেন স্বপ্নের মত কাটছে। রাজকাৰ্যের অবসানে নিজের রথটি নিয়ে বার হয়ে নগরীর বাইরে বহু দূর পর্যন্ত চলে যায়। এখানে সে প্ৰায় একা । দু’ একটি ভারতীয় কর্মচারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে এবং মালবের ভাষা সে একরকম আয়ত্ত করে ফেলেছে এক বৎসরে । এই সময় একদিন সে তার সেই পরিচিত উদ্যানবাটিকাতে ঢুকাল পথের পাশে রথ থামিয়ে। পুষ্পে পুষ্পে, নবদ্বল্পী পল্লবে, চু্যতমুকুলের সুবাসে, কোকিলঝঙ্কারে প্রাচীন উস্তান তার বৃদ্ধিত্ব পরিহার করে নবযৌবনের রূপ পরিগ্রহ RVD f. -ye