পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছাত্রের মত কলেজ ম্যাগাজিনে দু-একটা প্ৰবন্ধ, এক-আধটা কবিতা যে না লিখেছি তা নয়, বা প্ৰতিবেশীর অনুরোধে বিবাহের শ্ৰীতি-উপহারের কবিতা যে দু-পাঁচটা না লিখেছিলাম তাও নয়-কিন্তু সে কে না লিখে থাকে, ? সুতরাং আমি তাকে বললাম-"লেখা কি ছেলেখেলা হে যে কলম নিয়ে বসলেই হল ? ওসব খামখেয়ালি ছাড়া। আমি কখনও লিখিনি, লিখতে পারবও না । তুমি হয়ত পারবে- আমার দ্বারা ওসব হবে না।” সে বললে—“খুব হবে। আপনি যখন বি-এ পাস, তখন আপনার কাছে এমন কিছু কঠিন হবে না। একটু চেষ্টা করুন তাহলেই হয়ে যাবে।” তখন বয়েস অল্প, বুদ্ধিসুদ্ধি পাকেনি, তবুও আমার মনে হল, বি-এ পাস তো অনেকেই করে, তাদের মধ্যে সকলেই লেখক হয় না কেন ? অথচ বি-এ পাস করা লোকদের ওপর পাচুগোপালের এই অহেতুক শ্রদ্ধা ভেঙে দিতেও মন চাইল না । এ নিয়ে কোনও তর্ক আমি তার সঙ্গে করিনি । কিন্তু করলেই ভাল হত, কারণ এর ফল হয়ে দাড়াল বিপরীত। দিন দশোক পরে একদিন স্কুলে গিয়ে দেখি সেখানে নোটিশ-বোর্ডে, দেওয়ালের গায়ে, নারকেল গাছের গুড়িতে সর্বত্র ছাপানো কাগজ টাঙানো-তাতে লেখা আছে—বাহির হইল! বাহির হইল! বাহির হইল! এক টাকা মূল্যের গ্ৰন্থমালার প্রথম উপন্যাস ! লেখকের নামের স্থানে আমার নাম দেখলাম । আমার তো চক্ষুস্থির। এ নিশ্চয় সেই পাচুগো পালের কীর্তি। এমন ছেলেমানুষী সে করে বসবে জানলে কি তার সঙ্গে মিশি। বিপদের ওপর বিপদ, স্কুলে ঢুকতেই শিক্ষক ছাত্রবৃন্দ সবাই জিজ্ঞেস করে,-“আপনি লেখক তটি তো এতদিন জানতাম না মশাই ? বেশ বেশ । তা বইখানা কি বেরিয়েছে নাকি ? আমাদের একবার দেখিয়ে যাবেন।” হেডমাস্টার ডেকে বললেন, তার স্কুল লাইব্রেরিতে একখানা বই দিতে হবে। সকলের নানারূপ সকৌতুহল প্রশ্ন এড়িয়ে চলি সারাদিন-কবে থেকে আমি লিখছি, আর আর কি বই আছে, ইত্যাদি। স্কুলের ছুটির পরে বাইরে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি। এমন বিপদেও মানুষ পড়ে । তাকে খুজে বার করলাম বাসায় এসে । দস্তুরমত তিরস্কার করলাম তাকে, এ তার কি কাণ্ড ! কথার কথা একবার একটা হয়েছিল বলে একেবারে নাম ছাপিয়ে এরকমভাবে বার করে, লোকে কি ভাববে! R8 R lih