পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“লেখাটা নিয়ে বলেছে শীগগির ছাপবে। চুপি চুপি ডাকঘবে গিযে বলে এলাম, আমার নামে যদি বুকপোস্ট গোছের কিছু আসে, তবে আমাকে স্কুলে বিলি যেন না কিবা হয়। কারণ লেখা ফেবত এসেছে এটা তাহলে জানাজানি হয়ে যাবে সহকর্মী ও ছাত্রদের মধ্যে । দিন গুণি, একদিন সত্যিই ভকিপিওন স্কুলে আমাষ বললে--আপনার নামে বুকপোস্ট এসেচে, কিন্তু গিয়ে নিয়ে আসবেন । আমাব মুখ বিবৰ্ণ হয়ে গেল। নবজাত রচনার প্রতি অপবিসীম দরদ র্যারা অনুভব কবেছেন তারা বুঝবেন আমার দুঃখ । এতদিনের আকাশকুসুম চযন তবে ব্যর্থ হল, লেখা ফেরত দিয়েচে । কিন্তু পরদিন ডাকঘর থেকে বুকপোস্ট নিযে খুলে দেখি, যে, আমার <চনাই বটে, কিন্তু তার সঙ্গে পত্রিকাব সহকাৰী সম্পাদকেবা একটি চিঠি । তাতে লেখা আছে, রচনাটি তারা মনোনীত করেচেন, তবে সামান্য একটুআধটু অদল-বদলের জন্য ফেরত পাঠানো হল, সেটুকু করে আমি যেন লেখাটি তাদের ফেরত পাঠাই, সামনের মাসেই ওটা ছাপা হবে। অপূর্ব আনন্দ আর দিগ্বিজয়ীর গর্ব নিযে তাকঘব থেকে ফিবি । সগর্বে নিয়ে গিয়ে চিঠিখানা দেখাতেই সবাই বললেন--“কারু সঙ্গে আপনাব আলাপ আছে বুঝি ওখানে ?- আজকাল আলাপ না থাকলে কিছু হবার জোঁ-টি নেই। সব খোশামোদ, জানেনই তো ।” তাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না, যার হাতে লেখা দিয়ে এসেছিলাম, তাব নাম পৰ্যন্ত আমাব জানা নেই। তাৰ পব সে গ্রামেব এমন কোনও লোক বইল না যে আমার চিঠিখানা না একবার দেখলে। কারও সঙ্গে দেখা হলে পথে তাকে আটকাই এবং সম্পূর্ণ অকারণে চিঠিখানা আমার পকেট থেকে বেরিযে আসে, এবং বিপন্ন মুখে তাকে বলিতাই তো, ওরা আবার একখানা চিঠি দিয়েচে, একটা লেখা চাই-সময়ই বা তেমন কই !-হায়! সে সব লেখকজীবনের প্রথম দিনগুলি । সে আনন্দ, সে উৎসাহ, ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখার সে বিস্ময় আজও স্মবাণে আছে, ভুলিনি। নিজেকে প্ৰকাশ করার মধ্যে যে গৌরব এবং আত্মপ্ৰসাদ নিহিত, লেখকজীবনের বন্ড পুরস্কার সবচেয়ে তাই-ই। স্বচ্ছ সরল ভাবানুভূতির যে বাণীরূপ কবি ও কথাশিল্পী তার রচনার মধ্যে নিয়ে যান-ত সার্থক হয় তখনই যখন পাঠক সেই ভাব নিজের মধ্যে অনুভব করেন । এইজন্য লেখক ও পাঠকের সহানুভূতি ভিন্ন কখনও কোন রচনাই সার্থকতা লাভ করতে পারে না। SR 8t R. n.-s