পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধলকোবাদের চিঠি কাল গিয়েচে পূর্ণিমা। বাংলো একটা বনাবৃত ছোট পাহাড়ের চুড়ায়, মধ্যে একটা উপত্যক। যে দিকেই দেখি নিবিড় অরণ্যানী ও শৈলচুড়া ঘিরে আছে চারিদিকে । গভীর রাত্রে কাল জ্যোৎস্নামাত অরণ্যে যখন ময়ুৰ ও সম্বর হরিণের ডাক শুনলুম, তখন সত্যই মনে হল কোথায় আছি ? বন্য হস্তীর উপদ্রব সর্বত্র । যেখানে সেখানে হাতীর নাদ পড়ে আছে। কাল বড় মজা হয়েচে । চা খেয়ে আমি, মিঃ সিংহ, রেঞ্জ অফিসার মি: গুপ্ত তিন জনে বাংলো থেকে নেমে বনপথে বেড়াতে গেলুম হেঁটে । কি সুন্দর অপরাহের ছায়াবৃত সে অপূর্ব বনকান্তার ! ময়ূৱ-নিনাদিত বনভূমি বাল্মীকির রামায়ণের অরণ্যকাণ্ডের বনবৰ্ণনা স্মরণ করিয়ে দেয়। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এল দেখে মিঃ গুপ্ত বললেন, চলুন, অন্ধকারে হাতী বেরুবে। যদিও পূর্ণিমা, কিন্তু এ বনে চতুৰ্দ্ধিকের শৈলমালা ভেদ করে চাদের আলো পড়তে এক ঘণ্টা দেৱী হয়ে যাবে। এই এক ঘণ্টা নিবিড় অন্ধকারে আবৃত বনের মধ্যে এক পাথরের ওপর বসে থাকা নিরাপদ নয় । এমন সময় মানুষের গলা শোনা গোল পায়ে-চলা সরু পথটার প্রান্তে। যারা আসচে। তারা আমাদের দেখে ভয়ে দাড়িয়ে গিয়েচে । আমরা ডাক দিলুম, দু'জন হো জাতীয় লোক। তারা বললেবালজুড়ি থেকে চাল কিনে আসচি। হো ভাষায় বললে, মিঃ গুপ্ত জানেন এ ভাষা । বালজুড়ি কোথায় ? ওরা বললে, বোনাইগড় স্টেট । কখন বেরিয়েচ ? বললে, বেলা দশটায় দক্ষিণ-পশ্চিমে এই অরণ্যভূমির ওপারে উড়িষ্যার বোনাইগড় করদরাজ্য । সেখানে ছ’ সের টাকায়। লোক দু’টি সেখানকার সীমান্তরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে বনে বনে পালিয়ে আসচে সস্তা চাল নিয়ে। আমাদের ভেবেচে সারাণ্ডা বনের সীমান্তরক্ষী । তাই এই ভয় । কিন্তু কি অপূর্ব সৌন্দৰ্য হল পূর্ণিমার চন্দ্রকরোজ্জল সে বনভূমির। গম্ভীর অরণ্যানী, চতুর্দিকে পাহাড় আর বনাবৃত উপত্যকা। পদে পদে বন্য হস্তী ও ব্যান্ত্রের ভয় সে সৌন্দৰ্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেচে। চলে আসচি, গভীর বনে কুকুর ডাকার মত শব্দ। মিঃ গুপ্ত বললেন, ও কুকুর নয়, লোকালয় নেই, কুকুর কোথা থেকে আসবে ? ও বার্কিং ডিয়ার, একপ্ৰকার হরিণ। কে বর্ণনা দিতে পারে এ জ্যোৎস্নাত্মাত বনভূমির ? গভীর অরণ্যে দূরের কোন পার্বত্য নদীর S & ህ”