পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উচু পাহাড়ের মাথায়? ওগুলো বাইসন আর সম্বর হরিণের পায়ের দাগ। ফরেস্ট গার্ড হাে জাতীয় বন্য লোক, সে সব পায়ের দাগ দেখে বললে, বুনো শুয়োর, বাইসন আর সম্বরের পায়ের দাগ। হাতীও আছে। বাঘ ? বাং q*忆可卤引a叶部可11 ক্ষুধায় শরীর অবসন্ন। সঙ্গে খাবার নিয়ে উঠেচে দু’ জন ফরেস্ট গার্ড । এক পাথরে বসে পেট পুরে খেলুম। শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে চা হল। ওঁরা তাড়াতাড়ি করতে লাগলেন, চলুন, বডড বাইসন আর হাতীর ভয়। আবার নামি সেই উত্তঙ্গ পর্বতশিখর থেকে নিম্নের ঘন বনের মধ্যেকার সর দুৰ্গম পথ দিয়ে। ওঠাও যেমনি, নামতেও তেমনি । বেলা ৫টার সময় নিচে নামলুম বটে, কিন্তু নাম লুম কোথায় ? বনের মধ্যেই। বনের ছায়া নিবিড়তপু হয়ে সান্ধ্য অন্ধকারে মিশিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েচে । ফরেস্ট গার্ড বলচে, হুজুর, হাতী বেরুবে, জলদি চলুন । কিন্তু বললেই তো হয় না। আরও আড়াই মাইল হেঁটে তবে আমাদের মোটর পর্যন্ত পৌছব। মোটর পর্যন্থ পৌছতে সন্ধ্যা হ’ল। হঠাৎ গার্ড বললে, হাতী ! হাতী ! চেয়ে দেখি উপত্যকার ওপারে পাহাড়ের গায়ের বনে রাঙা ধুলো-মাথা হাতী একটা গাছেঃ তলায় চুপ করে দাড়িয়ে। তখন সন্ধ্যা, ভাল দেখা যায় না-কেউ বলে হাত । কেউ বলে না। আমরা মোটরের ভেপু বাজাতেই দেখলুম রাঙা-ধুলো-মাখ জিনিসটা সরে গেল, সুতরাং নিশ্চয়ই হাতী । শুক্লাচতুর্দশীর অপূর্ব জ্যোৎস্না উঠল। তখন আমরা পার্বত্য কোইন নদী; উপলাস্তীর্ণ তীরে পৌছে গিয়েচি। দু’ ধারের নিবিড় অরণ্যানীর মধ্য দিয়ে কলকল তানে কোইনা নদী বয়ে চলেচে । আমি বললুম, চা খাওয়া যাক । চা আছে, চিনি আছে, দুধ নেই। আগুন করা গেল হাতীর ভয়ে। বাংলো আরও দু’ মাইল দূরে। ডালপালার আগুনে কেটলিতে জল চড়িয়ে দেওয়া হ’ল। যেদিকে যাই, সেদিকেই ঝিল্লিমুখর বনানী। জ্যোৎস্নাক্সাত প্ৰাচীন বনস্পতিশ্রেণী ধ্যানমগ্ন ঋষিদের মত শান্ত সমাহিত-জন্ম-মরণভীতিভ্ৰংশ কেন মহাদেবতার উপাসনায় বিভোর। জয় হোক সে দেবতার, র্যার করুণায় আড়া আমার মত দরিদ্রের এ অপরূপ বনস্থলী দর্শনের সুযোগ ঘটল । তারই শব্দহীন বাণী এই বনানীর নিশীথ নিস্তব্ধতার মধ্যে প্রহরে প্রহরে মুখরিত হয়ে উঠেচে । [ ধলকোবাদ ফরেষ্ট রেষ্ট হাউস হইতে ১৩-১১-৪৭ তারিখে বনগ্রাম নিবাসী শ্ৰীমন্মথনা চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত । ] AOo