পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমরা পাই, পদ্মাবুকের বজরায় কামরায় যা নিদ্রিত হয়ে পড়িনি-নির্জন রাত্রে বৃহস্যময়ী প্ৰকৃতি কখনও অবগুণ্ঠন উন্মোচন করেন, কখন তার সঙ্গে চোখোচোখি দেখা হবে।--তারই আশায় বিনিদ্ৰ বুজনী যাপন করেচে । রবীন্দ্রনাথের দানের তুলনা নেই, জীবনের এমন কোনো দিকও নেই, যদিকে তার দৃষ্টি পড়েনি, যার সম্বন্ধে তিনি কিছু-না-কিছু নতুন কথা না শুনিয়োচেন, তা শরৎকালীন দুপুর সম্বন্ধেই হোক, বা নাম উচ্চারণ করার পদ্ধতি নিয়েই হোক। এ যুগের বাংলার কবি, কথা-সাহিত্যিক, প্ৰবন্ধলেখক-তার কাছে সবারই ঋণের বোঝা বিপুল, বর্তমান চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রিত করেচেন। তিনি, ৰূপ দিয়ে চেন তিনি-বিশ্লেষণ কবে দেখলে সকলেরই চিন্তাব উপর ধীন্দ্রনাথের এই প্রভাব ধরা পড়বেই। একটা ক্ষু দ্ৰ প্ৰাদেশিক সাহিত্য থেকে তিনি বাংলা সাহিত্যকে আজ বিশ্বের * বাধারে সকলের আসনে বসিয়েচেন, এই বিপুল দানের, মানব-প্ৰতিভাব এই অনন্যসাধারণ বিকাশের তুলনা নেই বিশ্বসাহিত্যেব ইতিহাসে। "তার সাহিত্য-সৃষ্টির মূলে আছে যে প্রগাঢ় অনুভূতি, তা সাধারণ মনের খা,পার নয়, চেতনা ও অঙ্গভূতির যে স্তব সাধারণের দুবধিগম্য।--তাই তার কাছে আমর। যে লোকের সন্ধান পাই, আমাদের দৈনন্দিন তুচ্ছ অন্য ভূতি পবশ্বম্পরার বহু উধেবর্ণ সে এক অপরূপ আনন্দলোক —তাকে পথপ্রদর্শক না পেলে সেটা আমাদের নিকট অপবিজ্ঞাতই রয়ে যেত চিরদিন । জাতীয় চেতনার এই অগ্ৰগতি রবীন্দ্ৰ-সাহিত্যেব নিকট অপরিসীম ঋণে ঋণী-গীত শতাব্দীর অলঙ্কার ও অনুপ্রাস-বহুল বাংলা কাব্যের কথা বাদ দিলেও রবীন্দ্ৰনাথের অব্যবহিত পূর্বের কাব্যের সহিত র্তার যে তফাত, তা বাল্মীকিস্তৃপ ও হিমালয়ের ওফাত । অনুভূতির এই অপরিমেয় ঐশ্বর্ষের কথা ভেবেই শুধু এই কথা মনে হয় -এক জীবনে এত বিপুল রসাস্বাদ কি করে সম্ভব হোল, তখুনি আবার তারই কথায় তাকে বলতে ইচ্ছে করে কোন আলোতে প্ৰাণের প্রদীপ জালিয়ে তুমি ধরায় এস সাধক ওগো, প্রেমিক ওগো, পাগল ওগো ধারায় এস । { ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্র-জন্মদিবসের ভাষণ । লেখকের নিজের গ্রামে সভাটি অনুষ্ঠিত হয় । ] RV