পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যে বাস্তবতা সাহিত্যে দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা একটি বড় জিনিস। একই ঘটনা লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বিভিন্ন রূপ গ্ৰহণ করে বা পাঠকের মনে বিভিন্ন প্রকার রসের সৃষ্টি করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতার নিমিত্ত যে জিনিসটি বেশি প্রয়োজনীয় সেটি হচ্ছে ভূয়োদর্শন। জীবনের নানা বিচিত্র দিকের সঙ্গে পরিচয় যত নিবিড় হয়ে উঠবে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি তত স্বচ্ছ হবে। তারুণ্যের স্পর্ধায় একদিন যে বিশেষ মতবাদকে নিন্দা করে এসেছি, প্রৌঢ় মনের অভিজ্ঞতার আলোকে সে মতবাদকে শ্ৰদ্ধা করতে শিখবো। সাধারণ বুদ্ধির পিছনে বুদ্ধির অতীত আর একটি চৈতন্য বিদ্যমান। সাধকের সপ্তম ভূমির মত এই চৈতন্যও দু'প্রাপ্য ও চুরিধিগম্য। তপস্যা দ্বারা একে লাভ করতে হয়। তেমনি একে বুঝতে হলেও তপস্যার প্রয়োজন । মহাপ্ৰতিভাশালী বহু লেখকের অনেক রচনা। সেজন্যে সাধারণে বুঝতে পারেন না। কেমন করে পারবেন ? তিনি যে-লেখকের সংবাদ কথায় বা চিত্রে বা সুরে আমাদের কাছে পরিবেশন করতে চাইবেন, সে-লোক হয়ত তার কাছেও সদ্য-পরিচয়ের রহস্য কুহেলিকায় তখনও আবৃত । সে গভীর লোকের খবর ভাষার বন্ধনে বন্দী করে প্রচলিত উপমা-সাহায্যে প্ৰকাশ করা তার কাছেও তখন একটি কঠিন সমস্যা। হঠাৎ বন্ধনের মধ্যে ধরা দিতে চায় না। সে অনুভূতি ৷. অনেক অনুভূতি আবার এত অল্পক্ষণ স্থায়ী যে, তার স্থায়িত্বকালে তাকে প্ৰকাশ করবার সময় হয় না। স্মতির সাহায্যে হারানো মুহুর্তটির আনন্দের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হয়ত তার অখণ্ডত বজায় থাকে না। হয়ত সেই হারিয়ে ফেলার দরুন কিছু ভুলচুকও হয়। তবুও প্ৰতিভাশালী লেখকেরাই তা প্ৰকাশ করতে সমর্থ তাদের প্রকাশ-নিপুণতা দ্বারা, তঁদের ভাষার ঐশ্বৰ্য দ্বারা, তাদের সহজাত স্থাপন-ক্ষমতা দ্বারা । অক্ষম লেখকের লেখনী সে জিনিসের নাগাল পায় না । ক্ষমতাবান লেখককেও অবুঝের গালাগাল সহ্য করতে হয়। বহু প্ৰতিভাশালী লেখকের ভাগ্যেই এ ঘটনা ঘটচে। যারাই আজ সাহিত্যজগতের খবর রাখচেন, তারা এটি জানেন। আজ রবীন্দ্ৰনাথের কথা তাই বিশেষ মনে পড়ে। বাংলার রবীন্দ্ৰনাথ, বাঙালীর রবীন্দ্ৰনাথ যে কত বড় সম্পদ ছিলেন, বাঙালী আমরা এখনো তাকে বুঝতে পারিনি। তঁর যে বিরাট আদর্শ আমাদের 3 ዓNo