পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সামনে হিমালয়ের সমান উঁচু হয়ে অবস্থান করচে তার পাশে মেকি সাহিত্যের ও ধার-করা বিদেশী আদর্শের কল্পনাকে বসাতে আমরা যেন লজ্জা বোধ করি ; পারিপাশ্বিককে অগ্রাহ করে, আমাদের বাস্তব সমস্যাকে উপেক্ষা করে সোভিয়েট রাশিয়া থেকে সাহিত্যের আদর্শ আমদানি করতে, যেন ইতস্তত: করি। উৎকেন্দ্ৰিক বস্তুনিষ্ঠাই যে সাহিত্যের একমাত্র উপাদান নয়, রবীন্দ্ৰনাথের পরেও কি বাঙালীকে তা মনে করিয়ে দিতে হবে ? রবীন্দ্রনাথকে আমরা আমাদের স্বভাব সুলভ হুজুক-প্রিয়তার কেন্দ্র না করে তুলে প্রকৃতপক্ষে যে সংস্কৃতির ও যে উদার মন্ত্রের তিনি ঋষি ছিলেন—কি আর্টে, কি জীবনে, কি ধর্মে—আমরা যেন সেই মন্ত্রের সাধনা সুরু কবি । রবীন্দ্ৰনাথ বাঙালী জাতির নব মেরুদণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ; আমরা হুজুক কবে বেড়াই বটে, সেই মেরুদণ্ডের সন্ধান এখনও পেয়েছি কি ? সাহিত্য সমাজের মাপকাঠি। সমাজের বাস্তব পটভূমিতে যে বস-শিল্প রচিত হয়, শিল্পীমানসের প্রকাশ-ভূমি যাহা, তাহাই সাহিত্য। রাজনীতি আজকাল পৃথিবীর সর্বত্র সবচেয়ে অল্প স্থান অধিকার করে রয়েচে । সমাজের বেশির ভাগ লোক সকালে উঠে পড়েন দৈনিক খবরের কাগজ। তাতে যে আস্বাদ পান, সাহিত্যের মধ্যেও কি তাকেই খুজতে হবে ? আধুনিক দিনের সমস্যা নিয়ে সাহিত্য রচিত হতে পারে এবং হচেও ৷ ‘ব্রেইন-বো’র মত বড উপন্যাসও তৈরি হয়েচে যুদ্ধের আবহাওয়ায়। প্যারিসে জার্মান অধিকারেব দুঃস্বপ্ন লুই ব্ৰমফিল্ডকে প্ৰলুব্ধ করেচে। তাব বিখ্যাত উপন্যাসখানি লিখতে। কিন্তু পাশ্চাত্ত্যজাতির সমস্যা অন্যৰূপ। তারা যত ভীষণ দুঃখ অনাচাব সহ করেচে। বিগত মহাযুদ্ধের সময়ে, আমরা ততটা দুঃখের অভিজ্ঞতা লাভ কবিনি। আগস্ট আন্দোলনের ব্যাপক সত্ত্ব ছিল না। যে দুটি জিনিস খুব বেশি দোলা দিয়েচে আমাদের সামাজিক ও জাতীয় জীবনকে-ব্ল্যাকমার্কেট ও মন্বন্তর-সে দুটি বহু লেখকের উপজীব্য স্বরূপে একই করুণ রাগিণীর একঘেয়ে আলাপের মত বিস্বাদ হয়ে পড়েছে ক্ৰমশঃ । তবু স্বীকার করতে হবে তারাশঙ্করের “মন্বন্তর’, প্ৰবোধ সান্যালের ‘অঙ্গার’, মনোজ বসুর ‘দ্বীপের মানুষ’ প্ৰভৃতি এ সময়ের শ্রেষ্ঠ রচনা । শাশ্বত সাহিত্যের পথে এ রচনাগুলি পা বাড়িয়ে রয়েচে । এ কথা নিঃসঙ্কোচে বলা যায় যে লেখা আসে কবি-মানসের অন্তনিহিত তাগিদ থেকে। কবি মানসের বিভিন্নমুখী গতি থেকে বিভিন্ন ধরনের লেখার Sዓ 8