পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ কথাটি সবচেয়ে বড় মনে হয়, যিনি যাই নিয়েই লিখুন না কেন, প্ৰত্যেক রসসাহিত্যিকের একটা নিজস্ব ধৰ্ম আছে । তার নিজের কাছে যা পরিস্ফুট নয়, যা তাঁর কবিমানসকে তৃপ্ত করে না, জনসাধারণের কাছে প্ৰশংসা পাওয়ার লোভেই হোক বা সমালোচকের ভয়েই হোক, তেমন সৃষ্টিতে তিনি কখনো হাত দেবেন না। তার মন তখনই সক্রিয় হয়ে উঠবে, যখন তিনি বুঝবেন তার সমগ্ৰ ব্যক্তিসত্ত্বাকে আশ্রয় করে এ লেখা তৈরি। এ কঠিন আত্ম-স্বাতন্ত্র্যের জন্যে চাই সাহস, যা প্ৰত্যেক সত্যিকার সাহিত্যিকেরই আছে। নতুবা তিনি লেখক হতেই পারতেন না । সাহিত্য ও আর্টের মস্ত।বড় কাজ সমসাময়িক সমস্যার উল্লেখ করা, সমাজচেতন হওয়া, জনগণের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া নবদৃষ্টিভঙ্গির আবাহন-কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখতে হবে তাদের অপর উদ্দেশ্য হচ্ছে সৌন্দৰ্যস্থষ্টি, যা সমসাময়িক সমস্যারও অতীত। স্বধৰ্ম ত্যাগ করা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের ন্যায় আর্টের ক্ষেত্রেও ভয়াবহ । গভীর রহস্যময় এই মানবজীবন। এর সকল বাস্তবতাকে, এর বহু বিচিত্র সম্ভাব্যতাকে রূপ দেওয়ার ভার নিয়েছেন কথাশিল্পী । তাকে বাস করতে হবে সেখানে মানুষের হটকোলাহল যেখানে বেশি, মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, তাদের সুখদুঃখকে বুঝতে হবে। যে লেখক পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর সত্য চিত্র একেচোন, তিনি সকল মানুষের চিত্ৰই একেচেন । এত বড় মন্বন্তর ঘটে গেল বাংলাদেশে, অথচ চিত্রে ও রঙ্গমঞ্চে আমরা তার কি ছবি পেলাম ? আমরা পেলাম নায়িকার নাকে-কান্না প্যানপ্যাননি। গান, মিষ্টি মিষ্টি কথায় নায়কের প্ৰেমানিবেদন আর মান্ধাতার আমলের যাত্রার পালাক্স ট্র্যাডিশনে কতকগুলি পৌরাণিক নাটক। অথচ যারা পুরাণ-রচয়িত জনগণকে বাদ দিয়ে তারা চলেননি। পুরান দিনের গণমনের কত ব্যথা-বেদনার ইতিহাস ব্যাস-বাল্মীকির অমর মহাকাব্যগুলির মধ্যে অক্ষয় হয়ে আছে- কত গাথা, কত কাহিনী, কত কথা। সে যুগের পটভূমিকায় রচিত কথাশিল্প হচ্চে ওগুলি, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। সমসাময়িক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল কত গাথা, কত কাব্য-রাজসভায় মহাকবি সেগুলি আবৃত্তি করে যেতেন শিষ্যগণ সমভিব্যাহারে । এইজন্যে পুনরায় বলি সমাজ-সচেতনতা লেখকের মন্তবড় গুণ । যিনি দেশের অভাব-অভিযোগের প্রতি উদাসীন থেকে সাহিত্য রচনা করেন, তিনি নিজের কবিমানসের প্রতি অবিচার করেন। জীবনবোধের দায়িত্ব তিনি R79