পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হবে, তখন যদি ধূমকেতু দেখতে পাও-আমার কথা তোমার মনে হবে কি তখন ? আমি তখন মরে ভূত হয়ে যাবো।. তুমি তখন বৃদ্ধা, নাতিপুতি বেষ্টিতা হয়ে গল্প করবে বসে সন্ধ্যাবেলায়। নাতিকে আঙুল দেখিয়ে বলবে— ওই দ্যাখ রেখা, হালির ধূমকেতু উঠেচে-বিভূতিবাবু বলে একজন লোক আমার ছেলেবেলায় আমায় বলেছিল, এ ধূমকেতু আমি দেখবো। আজ বিভূতিবাবুর কথা তাই মনে পড়েচে । রেখা বললে-কে বিভূতিবাবু ঠাকুরমা ? তুমি বলবে-ওই আমাদের সেকেলে একজন লেখক ছিল, বেশ বইটিই লিখতো রেখা ভবিষ্যৎ যুগের মেয়ে তো-তাই ছোট বোন শিখার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলবে-ঠাকুমার যেমন কথা ভাই! কোথাকার কে বিভূতিবাবু, সে নাকি আবার বই লিখতো ! আমাদের নবজীবনবাবুকি প্ৰদীপবাবুর মত লেখক কোন কালে বাংলা দেশ দেখেচে ? ঠাকুরমার সব সেকেলে ঢংতারপরে দুইবোনে খিল খিল করে হেসে উঠবে। আর আমি ? কোথায় তখন আমি ?• • • হায় রে ! মৃত্যুলোকের পার থেকে হয়তো সন্দেহ দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ যুগের নবীনা বালিকা দুইটির দিকে চেয়ে ভাববো-একদিন ওদের ঠাকুরমা ওইরকম বালিকা ছিল, ওদের মতই। তার নাম কল্যাণী-কিন্তু নাতনীরা হয়তো সে নাম জানে না। বুডি ঠাকুরমার নাম জানিবার জন্য তাদের তত আগ্রহ নেই, নিজেদেব প্ৰসাধন নিয়েই ব্যস্ত। তরুণ মাত্রেই স্বার্থপর কিনা-নিজেদের কথা ছাড়া অপরের কথা ভাববার অবকাশ বা স্পৃহা ওদের বড় একটা থাকে না। জ্যোৎস্নার কথা তুমি লিখোঁচ, আমার ভাই লিখেচে ঘাটশিলার মাঠবন জ্যোৎস্নালোকে অদ্ভুত হয়েছে দেখতে, সেবা লিখেচে শিলং-এ এবার নাকি অদ্ভুত জ্যোৎস্না। গত শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্না নিশ্চয় খুব অদ্ভুত না হলে তিন জায়গা থেকে তিনজনে লেখেনি-কিন্তু হায়! আমি জ্যোৎস্নার এতটুকু দেখিনি। আকাশের চাদ দেখোঁচি হয়তো, ভেবেচি-আজ দেখোঁচি চাদ বেশ বড়, বোধ হয় একাদশী কি চতুর্দশী তিথি হবে-এই পৰ্যন্ত। সে চাদের জ্যোৎস্না মাটির পৃথিবীতে পড়তে দেখিনি-বেচারী চাদের সাধ্য কি বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতম সুসভ্য শহর কলকাতার বৈদ্যুতিক আলোর বৃহ ভেদ করে তার আলো পাঠাতে সাহস করে সেখানে ? Að e