পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পেছনে ফেলেচি, সামনেই দেখি ফাকা মাঠের মধ্যে দূরে একটা গ্রাম লি-লি করছে।-নিশ্চয়ই ওটা সেই সঞ্জয়পুর।-বাঁচা গেলো। বাবা! কি ভয়াটাই দেখিয়েছিলো লোকে ! দিব্যি ফাঁকা মাঠ, কাজেই লোকের বসতি গায়ের গরু-বাছুর চরছে মাঠে-কেন এ-সব জায়গায় বিপদ থাকবে ? আমি এই রকম সব ভাবছি, এমন সময় তালুপুকুরের ওদিকের পাডেক্স আড়ালে যে পথটা, সেই পথ বেয়ে একজন বৃদ্ধিকে আমার দিকে আসতে দেখলুম। বৃদ্ধ বেশ বলিষ্ঠ\গডনের, এই বয়সেও মাংসপেশী বেশ সবল, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে ছোটো একটা লাঠি । বৃদ্ধ আমায় বললে, “ঠাকুরমশায়, কোথায় ফুলবেন ?” -“যাবো মাখমপুর-” -“মাখিমপুর ! সে যে এখনও তিন ক্রোশ পথ• • •কাদের বাড়ি যাবেন ?” -‘শচীশ কবিরাজের বাড়ি ।” -“ঠাকুরমশাই কি কবিবাজামশায়ের গৈামস্ত ? -‘গোমস্ত নই, তবে যাচ্ছি জমিজমার কাজে বটে ।” — —“এ অঞ্চলে আর কাউকে চেনেন কি ? - মশায়ের নিজের বাড়ী কোথায় ?” -- “আমি তো এদিকে কখনও আসিনি, কাউকে চিনিও না। মাখমপুরেও নতুন ঘাচ্ছি।--” -“সেখানেও কেউ তাহলে আপনাকে চেনে না ?” --নাঃ, কে আর চিনবে ?” আমার এই কথায় মনে হলো যেন বুড়ো কি একটু ভাবলে, তারপর আমায় বললে, “কিছু যদি মনে না করেন, একটা কথা বলি। --রাত্রে আজ দয়া করে আমার বাড়ীতে পায়ের ধুলো দিন। আমরা জাতে বাকুই, জল-আচরণীয়, আপনার অসুবিধে হবে না। চণ্ডীমণ্ডপের পাশে বাইরের ঘর আছে, সেখানে থাকবেন, রান্নাবাড়া করে খাবেন• • • আসুন দয়া করে • সন্তুষ্ট হলুম। সত্যিই সেকালের লোকেরা অন্য ধরনের শিক্ষায় মানুষ। অতিথি-অভ্যাগতদের সেবা করেই এদেব তৃপ্তি ! বুদ্ধ এই প্ৰস্তাব না করলে রাঢ়-অঞ্চলের অজানা মেঠো-পথে সুমুখ-আঁধার রাতে যেতেই তো হতো মাখমপুরে, তিন ক্রোশ হেঁটে । গ্রামের পূর্বপ্রান্তে বড়ো মাঠের ধারে বৃদ্ধের বাড়ী। বৃদ্ধের নাম নফরচন্দ্র দাস। আমি চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে উঠতেই একটা কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠলো। VORS)