পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুকুয়ের এই ডাকটা আমার ভালো লাগলো না ; এর আমি কোনো কারণ বলতে পারবো না, কিন্তু এই কুকুরের চিৎকারের যেন একটা ছন্নছাড অমঙ্গলজনক অর্থ আছে-মঙ্গল-সন্ধ্যায় কোনো গৃহস্থবাড়ীতে আসিনি, যেন শ্মশানভূমিতে এসেচি বৃদ্ধের বাড়ী দেখে মনে হলো, বেশ অবস্থাপন্ন গৃহস্থ। বাউীর উঠোনে সারি সারি তিনটে বড়ো-বডো ধানের গোলা-গোলার সঙ্গে প্ৰকাণ্ড গোয়ালঘর, বলদ ও গাইয়ে প্রায় কুডি বাইশটা ৷ অন্তঃপুরের দিকে চারখানা বড়ো-বড়ো আটচালা ঘর। বাইবের এই চণ্ডীমণ্ডপ ও তার পাশে আর একখানা কুঠুরি। আমার কথাটা ভালো করে বুঝতে গেলে এই কুঠুরিটিকে চণ্ডীমণ্ডপ-সংলগ্ন একটা কামরাও বলা যায়, কারণ একটা সরু রোয়াকের দ্বারা চণ্ডীমণ্ডপের পেছন দিকের সঙ্গে সংলগ্ন ; অথচ দোর বন্ধ করে দিলে বাইরেব বাড়ীর সঙ্গে এর সম্পর্ক চুকে এক ভেতর-বাড়ীর একখানা ঘরের সামিল হয়ে দাড়ায়। আমায় বাসা দেওয়া হলো এই কুঠুরিতে। কুঠুরির একপাশে ছোটাে একটা চালা । সেখানে আমার রান্নার আয়োজন করে দিয়েচে । হাত-মুখ ধুয়ে সুস্থ হয়ে আমি বিশ্রাম করাচি । গৃহস্বামী এসে বললে, “ঠাকুরমশায়, রান্না চাপান, আর রাত করছেন কেন ?” আমি রান্নাচালায় বসে রান্না চড়িয়ে দিতে যাচ্ছি, এমন সময় দেখি, বাড়ীর একটি বৌ ভেতর থেকে একগাছ ঝাটা হাতে এসে আমার বান্নাচালার সামনে দিয়ে ঢুকে ঝাঁট দিতে লাগলো। কুঠুরির দরজা খোলা, আমি যেখানে বসে, শেখান থেকে কুঠুরিটার ভেতর দেখা যায়। আমি দু-একবার বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলুম। বৌটি বাট দিতে দিতে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখচে । দু-তিনবার বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে মনে হলো, বৌটি ইচ্ছে করেই আমার দিকে অমন করে চাইচে । আমি দস্তুর মতো অবাক হয়ে গেলুম। ব্যাপার কি ? সম্পূর্ণ অপরিচিত। মেয়ে, পল্পীর গৃহস্থবধু-এমন ব্যবহার তো ভালো নয়! কি হাঙ্গামায় আবার পড়ে যাবো রে, বাবা ! কর্তাকে কাছে বসিয়ে রাধতে রাধতে গল্প করবো নাকি ! এমন সময় বৌটি বাট শেষ করে চলে গেলো। কিন্তু বোধহয় মিনিটপাঁচেক পরেই আবার এলো। দেখে মনে হলো, সে যেন খুব ব্যস্ত, উদ্বিগ্ন, Vovo