পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জানলে কি বাবা এখানে বিয়ে দিতেন ? বিয়ের পর সব ধরা পড়ে গেলো আমার কাছে। এখন আমার একটি সন্তান হয়েছে—এ পাপ-ভিটেয় বাস করলে তার অকল্যাণ হবে। ওকে বারণ করি, কিন্তু ও কি করবে ? মাথার ওপর শ্বশুরমশায় রয়েছেন—পুরানো ডাকাত, দাদা রয়েচে-আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন বাবাঠাকুর, আর কোনো ভয় নেই• • •” সকাল হলো । বিদায় নেবার সময় বৃদ্ধ আমায পাঁচ টাকা গুরুপ্ৰণামী দিলে। বামাকে আড়ালে ডেকে বললুম, “তুমি আমার মা, আমার জীবনদাত্রী। আশীৰ্বাদ করি, চিরসুখী হও মা • • • বামার মতো বুদ্ধিমতী নারী জীবনে আর আমার চোখে পড়েনি। কতকাল হয়ে গেলো, এই বৃদ্ধ বয়সেও সেই দয়াময়ী পল্লীবধুটির স্মৃতিতে আমার চোখে জল এসে পড়ে, শ্রদ্ধায় মন পূর্ণ হয়ে ওঠে ! গঙ্গাধরের বিপদ অনেকদিন আগের কথা । কলকাতায় তখন ঘোড়ার ট্রাম চলে । সে সময় - মশলা-পোস্তায় গঙ্গাধর কুণ্ডুর ছোটখাটো একখানা মশলার দোকান ছিল। গঙ্গাধরের দেশ। হুগলী জেলা, চাপাডাঙ্গার কাছে। অনেকদিনের দোকান, যে সময়ের কথা বলাচি, গঙ্গাধরের বয়স তখন পঞ্চাশের ওপর । কিন্তু শরীরটা তার ভাল যাচ্ছিল না। নানারকম অসুখে ভুগতো প্ৰায়ই। তার ওপর ব্যবসায়ে কিছু লোকসান দিয়ে লোকটা একেবারে মুষড়ে পড়েছিল। দোকান ঘরের ভাড়া দু’মাসের বাকি, মহাজনের দেন। ঘাড়ে-দুপুরবেলা দোকানে বসে থেলো হুকো হাতে নিজের অদৃষ্টের কথা ভাবছিল। আজ আবার সন্ধ্যার সময় গোমস্ত আসবে ভাড়া নিতে শাসিয়ে গিয়েচে । কি বলা যায়। তাকে । এক পুরানো পরিচিত মহাজনের কথা তার মনে পড়ে গেল। তার নাম খোদাদাদ খাঁ, পেশোয়াৱী মুসলমান, মেটেবুরুজে থাকে। আগে গঙ্গাধরের লেনদেন ছিল তার সঙ্গে । কয়েকবার টাকা নিয়েচে, শোধও করেচে। কিন্তু সুদের হার বড় বেশি বলে ইদানিং বছর কয়েক গঙ্গাধর সেদিকে যায়নি। ভেবেচিন্তে সে মেটেবুরুজেই রওনা হোল। সুদ বেশি বললে আর উপায় কি ? টাকা না আনলেই নয়। আজি সন্ধ্যার মধ্যে । \か○8