পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাধিকানগরের হাটে, যেখানে আগে বিশ-ত্রিশখন গ্রামের মেয়েরা টোকি ভানা চাল নিয়ে আসতো, সেখানে আজকাল সাত-আটজন স্ত্রীলোক মাত্র দেখা যায়। তাও চাল পাওয়া যায় না। বড়তলার মোড়ে আর ওদিক সামটা বিলের ধারে ক্রেতার দল ভিড় পাকিয়ে আছে, সেখান থেকে চাল কাপড়াকডি করে নিয়ে যায় । হাঁটুরে লোকেরা চাল বড় একটা পায় না। আজি দু’হাট আদৌ চাল না পেয়ে গঙ্গাচরণ সতর্ক হয়ে এসে সামটা বিলের ধারে দাড়িয়েচে, একটা বড় জিউলি গাছের ছায়ায় । সঙ্গে আরও চাব-পাঁচজন লোক আছে বিভিন্ন গ্রামের । বেলা আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে । রোদ খুব চড়া । কয়রা গ্রামের নবীন পাডুই বলচে-বাবাঠাকুর, আমরা তো ভাত না পেয়ে থাকতি পারি নে, আজ তিন দিন ঘরে চাল নেই। গঙ্গাচরণ বললে-আমার ঘরে আজ দু’দিন চাল নেই। আর একজন বললে-আমাদের দু’দিন ভাত খাওয়া হয় নি। নবীন পাডুই বললে—কি খেলে ? -কি আর খাবো ? ভাগ্যিস মাগীনীরা দু’টো চি ড়ে কুটে রেখেছিল। সেই বোশেখ মাসে, তাই দুটো করে খাওয়া হচ্ছে। ছেলেপিলে তো আর শোনাবে না, তারা ভবপেট খায়, আমরা খাই আধাপেটা ৷ --তা চিাড়ের সেরও দেখতি দেখতি হয়ে গেল বারো আনা, যা ছিল দু’আন । - একি বিশ্বোস করতি পারা যায় ? কখনো কেউ দেখোচে না শুনেচে যে চিাড়ের সেরা বারো আনা হবে ? গঙ্গাচরণ বললে-কখনো কি কেউ শুনেচে যে চালের মণ ষোল টাকা হবে ? নবীন পাডুই দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল। সে জোয়ান মানুষ, যদিও তার বয়েস ঠেকেচে পঞ্চাশের কোঠায় ; যেমন বুকের ছাতি, তেমনি বাহুর পেশী ; ভূতের মত পরিশ্রম করেও যদি আধাপেটা খেয়ে থাকতে হয়, তবে আর বেঁচে সুখ কি ? আজি দু-তিন দিন তাই জুটচে ওর ভাগ্যে। এমন সময় দেখা গেল আকাইপুরের মাঠের পথ বেয়ে তিন-চারটি স্ত্রীলোক চালের ধামা, কেউ বা বস্তা মাথায় বড় রাস্তায় এসে উঠলো । সবাই এগিয়ে চললো অমনি ।