পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান 総o) —কাল থেকে তুমি একবারও মাইএ মুখ তাওনি যে বাবা আমার ! মই খাবা ? মায়ের মাইএ মুখ দেব না, ও মানিক আমার ? আর মুখ দেব না ? চোখ চাও দিনি— মেয়েটির আকুল ক্ৰন্দনে যতীনের মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ধরণের চঞ্চলতা দেখা দিল, পরের কান্না শুনে এমন কখনো তার হয়নি—সম্পূর্ণ অনমুভূত কোন অনুভূতিতে ওর চোখে জল এসে পড়লো । পুষ্প বল্লে—চলে এস যতীনদ, চলো সব বলচি। তুমি পুনর্জন্মের টানে পড়ে পৃথিবীতে জন্মেছিলে আজ ছ'সাত মাস। ওই তোমার মা। আজ আবার দেহ থেকে মুক্তি পেলে । ওই মৃত শিশুই তুমি—কি বিপদেই ফেলেছিলে আমাদের । যতীন অবাক হয়ে বল্পে—পুনর্জন্মের টান ! সে কি ! আমি এই বাড়ীতে— —এই ঘরেই জন্মেছিলে । এরা ব্রাহ্মণ, গ্রামের নাম কোলা-বলরামপুর, জেলা যশোর । ভগবানের কাছে বহু ডাক ডেকে আর করুণাদেবীর দয়ায় আজ উদ্ধার পেলে—নতুবা দেহ ধরে এই সব অজ পাড়াগায়ে এখন বহুকাল কাটাতে হোত—পুনর্জন্মের ঠালা বুঝতে পারতে। বার বার পৃথিবীতে যাওয়া-আসার কুফল এখন বুঝতে পারচো তো ? কতবার না বারণ করেছি ? যতীনের মন তখন কিন্তু পুষ্পের ওসব আধ্যাত্মিক তিরস্কারের দিকে ছিল না। তার সামনে বসে এই তার পৃথিবীর মা, গরীব ঘরের মা, তারই বিয়োগব্যথায় আকুলা, অশ্রমুখী । গত ছ'মাসের শৈশবস্তৃতি কোনো দাগই কাটেনি তার শিশু-মস্তিষ্কে । কিন্তু কত বিনিদ্র রজনী যাপনের মৌন ইতিহাস ওই দরিদ্রা জননীর তরুণ মুখে । তারই মা, তারই নবজন্মের দুঃখিনী জননী, যার বত্ৰিশ নাড়ী ছিড়ে ছ'মাস পূর্বে এই দরিদ্র গৃহে কত আশা আনন্দের ঢেউ তুলে একদিন সে পুনরায় ধরণীর মাটিতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। কি অদ্ভুত মোহ, কি আশ্চর্য মায়ার বাধন, মনে হচ্চে, স্বৰ্গ চাইনে, করুণাদেবীকে চাইনে, পুষ্পকে চাইনে, আশাকে চাইনে, আধ্যাত্মিক উন্নতি-টুন্নতি চাইনে—এই পৃথিবীর মাটিতে পৃথিবীর এই মায়ের কোলে মুখদু:খে সে আবার মামুব হয় ! এই টিপ, টিপ বৃষ্টিধারা, এই বর্ষার রাত্রিটি, এই গরীব মায়ের তারই জন্তে এ আকুল বুকফাটা বিলাপ-এ সব জীবনস্বপ্নের কোন গভীর রহস্যময় অন্ধ অভিনয়ের দৃষ্ঠপট ? ভগবান হিরণ্যগর্ভের অধিষ্ঠিত স্বপ্ন । ওর মনে পড়ল যাত্রায় শোনা গানের দুটো লাইন— এ নাটকের এ অঙ্কে পেয়েছি স্থান তোর অঙ্কে, , হয়তো যাবে পর অঙ্কে পুর অঙ্কে পুত্র সেজে। ওদের মধ্যে একজন প্রৌঢ় বয়ে-জার কেঁদে না বে, যা হবার হয়ে গেল, এখন উঠে বুক বঁধো—মনে করে ও তোমার ছেলে নয়—ভারত করতে যদি ও আসতো তা হোলে কোলজোড়া হয়ে থাকতো, છાં ভারত করতে তো আসে নি—কেঁদে না— একজন আধৰুড়ো গোছের লোক বল্পে - বিষ্টি মাথায় এখন আর কোথায় যাবে।--সকালের আর বেশি দেরি নেই, সাধন আর হরিচরণকে নিয়ে আমি যাবে। এখন— . প্রৌঢ় বল্লে—ৰিষ্টিরও বাপু কামাই নেই—সেই যে আরম্ভ করেচে বিকেলবেলা, আর