পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ఫిసె করুণাদেবী বল্পেন—পথিক কেউ হবে । দেশে দেশে বেড়িয়ে বেড়ানোই তার কাজ বলে মনে হোল। নাস্তিক দেবতা । তরুণ দেবতা একটুখানি চুপ করে থেকে বল্পেন—নাস্তিক কি? মনে হয় না। ওদের উপাসনাই ওই । বিশ্বে-ব্রহ্মাণ্ডে এমন অনেক আবিষ্কারক আছে, এদের শক্তি যথেষ্ট, তেজ অসীম । তাদের মধ্যে কেউ হবে । আচ্ছা, তোমরা আমার সঙ্গে চলো, আর একটা জায়গা দেখিয়ে আনি— যতীন বল্লে—দেবতা, আপনার কথা আমি ওই মেয়েটির মুখে আগে শুনেচি । তবে আপনাকে দেখবার সৌভাগ্য হয়নি আমার । —না, কি করে দেখবে । পুষ্প আর তুমি এক স্তরের লোক নও-- পুষ্প বল্পে –উনি এক বিপদে পড়েছিলেন—চুম্বকের ঢেউএ পড়ে পৃথিবীতে গিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন—সবে এসেচেন সেখান থেকে । দেবতা ধীরভাবে ধল্লেন--তা সম্পূর্ণ সম্ভব। খুব সাবধানে চলাফেরা কোরো। ওই যে পথিক দেবতার কথা বলছিলে, ওঁরা এ কল্পের জীব নন। পূর্ব কল্পে ওঁদের দেবত্বপ্রাপ্তি হয়েচে—মুক্ত আত্মা হয়ে বহু উধেব উঠে বহু তেজ সঞ্চয় করেচেন, কিন্তু ওঁরাও পুনর্জন্মের আকর্ষণকে ভয় করে চলেন । তবে এই লোকটির এখনও অনেক জন্ম বাকি—একে পৃথিবীতে জন্মাতে হবে অনেকবার। " যতীন বার বার ওই এক কথা শুনে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। সে বিরক্তি না চাপতে পেরে বলে উঠলো—দেব, তার জন্যে আমি দুঃখিত নই। পৃথিবীতে জন্ম নিলে কষ্টট কি ? —আমি জানি। যে জানে সে ও বিশ্বের সব কিছু এবং বিশ্বদেব একবস্তু এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই—তার পক্ষে পৃথিবী বা স্বর্গসমান হয়ে গিয়েচে । যে জানে পৃথিবীর সব কিছুই তিনি, তার কাছে পৃথিবা ও স্বর্গ একই স্বরে বাধা মোহন সঙ্গীতে। তোমাদের জ্ঞানী লোকেরা তাই তোমাদের শ্ৰীকৃষ্ণকে বংশীধারী কল্পনা করেচেন। কিন্তু এ চোখে পৃথিবীর সবাই দেখে কি ? সাধারণ মানুষ কর্ম অনুসারে প্রথম তিন স্তরে গতাগতি করে, মরে ভূলোক থেকে ভূবলে কে আসে, সেখান থেকে উন্নতি করে স্বৰ্গলোকে আসে—আবার সেখান থেকে জন্মায় পৃথিবীতে, আবার মরে, আবার জন্মায়, আবার মরে । একে বলে মানব-আবর্ত । চাকার মত ঘুরচে এই আবর্ত—চলে, একটা ব্যাপার তোমায় দেখাই, পৃথিবীতেই চলে, সেখানে তোমরা সহজ ও স্বচ্ছন্দ অবস্থায় থাকবে ? চলো তোমাদের দেশেই নিয়ে যাই— মহাশূন্তের পথহীন পথে করুণদেবী ওদের নিয়ে আগে আগে চল্লেন। দূরে একটা কি বিশাল গ্রহ নিরন্ধ অন্ধকার সমুদ্রে পাক খেয়ে ঘুরচে । -হু করে নেমে এল—একটু পরে পৃথিবীর এক তুষারাবৃত পর্বতশিখর ডিঙিয়ে ওরা এক নদীর ওপরকার শূন্যে এসে স্থির হয়ে দাড়াল। দেবতা পিছনে পিছনেই আসছিলেন । বল্লেন—এটা চিনতে পারচো কী নদী ? যতীন বল্পে-না দেব, ঘোর অন্ধকার পৃথিবীতে—কিছু দেখতে পাচ্চিনে—এখন বোধ হয় রাতদুপুর ।