পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У е о বিভূতি-রচনাবলী করুণাদেবী হেসে বল্লেন---এত বড় নদী বাংলাদেশে ক’টা আছে । আন্দাজ করে বলে । —আজে, হয় গঙ্গা, নয় পদ্মা । —ওই রকমই, এটা গঙ্কা । দেবতা হেসে বল্পেন—তুমিও ঠিক ভাল বলতে পারলে না, গঙ্গা তো বটে। মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা– যতীন বিস্ময়ের স্বরে বল্লে—আপনি বাংলাদেশের খবর সব জানেন দেখচি । করুণাদেবী মৃদু সস্নেহ হাঙ্গে ওকে নেপথ্যে বল্লেন—ও রকম বোলো না। উনি কে তা তোমরা জানো না । পরে বলবো । ኧ একটা ছোট্ট খাল। একটা আমবাগান। মুর্শিদাবাদ জেলা, স্বতরাং বনবাগান বেশি নেই, মস্ত বড় মাঠ একদিকে, একদিকে ছোট্ট একটি গ্রাম ! যতীন বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলে সেই ঘোর অন্ধকারের মধ্যেই গ্রামের ঘরের আনাচে-কানাচে অনেকগুলি নিম্নস্তরের ধূসর ও মেটে সি দুরের রঙের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্চে-কেউ এ-বাড়ী, কেউ ও-বাড়ী। তারা যদি মানুষ হোত তবে আনাচে-কানাচে এদের এমনতর গতিবিধি দেখে সন্দেহ হোত এরা নিশ্চয়ই চোর বা ডাকাত । যতীন অবাক হয়ে বল্লে—তাই তো, এরা কি করচে এখানে ? পুষ্প হাসিমুখে বল্লে—আমি বুঝতে পেরেচি অনেকটা, যদি তাই হয়, যা ভেবেচি– যতীন বল্লে—কি পুষ্প ? তরুণ দেবতা বল্পেন—পুপ বুঝেচে । ওরা পৃথিবীতে জন্ম নেবার জন্যে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্চে । প্রতি রাত্রেই এমনি লোকের বাড়ীর আশে-পাশে ঘোরে । কিন্তু ভিড় বেশি–সবাই সুবিধে পায় না। তৃষ্ণাই পুনর্জন্ম গ্রহণ করায় । ভুবর্লোকে ওদের ভাল লাগচে না, সেখানে পৃথিবীর স্থূল বাসনা কামনার পরিতৃপ্তি হয় না—সুতরাং ওরা চাইচে আবার দেহ ধরতে । কিন্তু তার প্রার্থী অনেক । ওদেরই মত। সুতরাং জন্ম নিতে চাইলেও জন্ম নেওয়া হয় না। উচ্চতর আত্মারা বংশ দেখে, পিতামাতা দেখে জন্ম নেওয়ার সময়ে । এদের সে সব নেই, যে কোন বংশ, জাত, কুল হোলেই হোল । দেহ ধারণ নিয়ে কথা । যতীন বল্লে—দেব, এরা কতদিন ধরে এমন ঘোরে ? -পৃথিবীর হিসেবে কেউ কেউ দশ বছর পর্যন্ত ঘোরে। এই এক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা— এই অবস্থাকে প্রেতত্ব বলে তোমরা । কারো স্বাধীন কাজে আমরা কোনো বাধা দিই না-— জীব যখন নিজের ভ্রম বুঝবে তখন সে নিবৃত্ত হবে । যতদিন তৃষ্ণ, ততদিন তাকে বাধা দিয়ে ফল হবে না। সে ভুবলোকে ঘোর অমুখী অবস্থায় থাকবে তার চেয়ে যাও বাপু, পৃথিবীতেই গিয়ে স্থখী হও । চলে, এখানে কষ্ট হচ্চে—আর নয়— ওরা যেখানে এসে বসলো, সেটা একটা পর্বতশিখর, বড় চমৎকার পাইন এবং দেওদার গাছের নির্জন অরণ্যান । গাছের ডালে ডালে অগণিত পরগাছায় রং-বেরঙের ফুল। পায়ের নীচে পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে আছে, গভীর রাত্রি । আকাশের মাঝখানে চওড়া জলজলে