পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান y06: বিশ্বাস করলে তো মানুষ আর মানুষ থাকে না, ভগবান হয়ে যায়। ওরা সব মহলোকের সেই গ্রামটিতে ফিরে এল। তারপর তিনি ওদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন আবাস-বাট দেখালেন জনপদের। পাহাড়ের গায়ে স্তরে স্তরে নানা রঙের ফুল, কোনো স্থানে কোনো অপার্থিব পশুর মূর্তি, স্ফটিকে তৈরি। কোথাও বড় বড় বৃক্ষশ্রেণী, কোথাও সরোবর। দূরে দূরে এইসব বনবীথি ও উষ্ঠানের মধ্যে মধ্যে অতি স্বন্দর মুন্দর প্রাসাদ ও অট্টালিকা। শুভ্র স্ফটিক প্রস্তর ছাড়া অন্য কোনো উপাদান এই প্রাসাদ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়নি। গাছে গাছে কুস্থমিত লতা মালার আকারে জড়িয়ে, আরতির পঞ্চপ্রদীপের শিখার মত কোনো কোনো রক্তবর্ণ পুষ্প উধ্বমুখী হয়ে ফুটে আছে। জনপদের কিছুদূরে নিভৃত অরণ্য শিলাবাধানে পথের দুপাশে, অথচ সে সব অরণ্যে জুই, গোলাপ, কাঞ্চন ফুলের মত দেখতে আলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মণ্ডলীর আকারের সুগন্ধি বনকুস্কম অজস্ৰ ফুটে আছে। পাহাড়ের কোলে গুহা ও প্রস্তরনিমিত মন্দির-–যেন বহুকালের বলে মনে হয় । ওদের সঙ্গী বল্লেন -ওই সব গুহাতে মহলোকের প্রাচীন সাধুর ভগবানের চিস্তাতে নিমগ্ন থাকতেন। এখন বহুদূর পথে, অনেক উধ্বলোকে তারা চলে গিয়েচেন, পৃথিবীর হিসেবে হাজার হাজার বছর আগেকার কথা। এখন ওগুলি তীর্থস্থান হিসেবে বিদ্যমান আছে, তবে ওই বনস্থলী, নিভৃত গিরিগুহা ও মন্দিরগুলিতে বসলেই আত্মা স্বভাবত অস্তমূখী ও আবুতচক্ষু হয়ে নিজের হৃদয়কন্দরের অন্ধকার গহনে ཏྣ་ཤ দিয়ে নিজের স্বরূপ বুঝতে উন্মুখ হয়ে ওঠে । যতীন বল্লে—আচ্ছা, আপনাদেরও কি ধ্যানধারণা সাধনার প্রয়োজন হয় ? - আমরা তো অনেক নিম্নলোকের জীব ! সত্যলোকের উধ্বস্তরের দিব্য মহাজ্যোতির্ময় ব্রহ্মস্বরূপ জীবেরাও ধ্যান ও সাধন দ্বারা আত্মশক্তি উদ্বুদ্ধ করেন। ভগবানের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ সাধিত করেন। আমরা ধ্যান-ধারণা,দ্বারা জল, তপ ও সত্য লোকের অধিবাসীদের সঙ্গে আদানপ্রদান চালাই। তাদের অদৃশু সাহায্য প্রার্থনা করি । —র্তারা কি আপনাদের কাছেও আদৃত ? —-সম্পূর্ণ। বিনা ধ্যান-ধারণায়-তাদের মত উচ্চ জীবদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সম্ভব নয়। আমাদের চোখে তারা সম্পূর্ণ অদৃশ্য। —র্তাদেরও উধেব লোক আছে ? —আছে, অনেক আছে। সত্যলোকেরই উধ্বতন স্তরের জীবের ঐ লোকের নিম্ন স্তরের জীবদের নিকট অদৃষ্ঠল তার উর্ধ্বে ব্রহ্মলোক তার উর্ধ্বে সর্বলোকাতীত পরব্রহ্মলোক বা গোলক । তারও উর্ধ্বেনিগুৰ্ণ ব্ৰহ্মলোক-কিন্তু সেখানকার খবর কেউ দিতে পায়ে না—কেউ জানে না। এসব লোকের তত্ত্ব অত্যন্ত গুহ – সাধারণ জীবেরা এর খবর রাখে না বা তাদের কোনো আবশ্বকও নেই এসবে। তবে আমারও এইসব লোক সম্বন্ধে কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই —কারে থাকে না। উধ্বলোকের কোনো কোনো দেবতা দয়া করে দেখা দিয়ে যেমন বলেচেন, তেমনি জানি । o --শ্রাম নগর বেঁধে বাস করেন কেন ?