পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sw e বিভূতি-রচনাবলী কথা বলতে অজ্ঞান । ভোগ না করলে ওর নারীতে আসক্তি যাবে না । পুষ্প হেসে বিজয়িনীর মত স্থাপিত হয়ে গ্রীবা বাকিয়ে বরে—স্বর্গে মেয়েমাহুষের অভাব ? যদি বলে আজই তাকে দেখিয়ে দিয়ে আসি কাকে মেয়েমানুষ বলে ! করুণাদেবীকেও নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিই—মুছা হয়ে পড়ে যাবে তক্ষুনি । যতীন মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর বিছাল্পতার মত অপূর্ব কাস্তির দিকে চেয়ে বল্পে তুমিই যথেষ্ট । আর তাকে নিয়ে যেতে হবে কেন । মুছ1তো দূরের কথা, একদম পাগল হয়ে ক্ষেপে যাবে। কিন্তু তার দরকার মেই। বিভ্রান্তই করে দেওয়া হবে, উপকার কিছু হবে না তাতে । পুষ্প কৃত্রিম রাগের স্বরের রেশ তখনও টেনেই বল্লে—না, আমার রাগ হয়েচে শুনে যে, সে মুখ বলে স্বর্গে নারী নেই! নারীকে খুজতে যেতে হবে পৃথিবীতে। —তোমরা চোখ ধ"াধিয়ে বেচারীকে পাগল করেই দিতে পারে, কিন্তু সে যা চায় তা দেবে কোথা থেকে ? ওকে পাঠিয়ে দাও পৃথিবীতে। একজোড়া আগ্রহভর কালে ভ্রমরচোখের চাউনি ওর দরকার হয়েচে । —আচ্ছ, যতুদা, আমি যদি ওকে একেবারে আজন্ম ব্রহ্মচারী সন্ন্যাসী করে দিতে পারি ? —জন্ম নেওয়ার পরে ? পুষ্প হালি-হাসি মুখে বল্লে—হঁ্যা । নয়তো কি এখানে ? —কিলিয়ে কাঠাল পাকানো দরকার কি ? আত্মাকে তার স্বাভাবিক পথে তার স্বাভাবিক গতিতে যেতে দাও । –এই কথাটিই আশা-বৌদির বেলা তুমি এতদিন বুঝতে চাইতে না যতুদা। অপরের বেলাতে বেশ বুঝলে । 蠟 যতীন চুপ করে রইল । ওপারের হালিসহরের খামান্বন্দরীর মন্দিরে সন্ধ্যার আরতিধ্বনি শোনা গেল । গঙ্গার বুকে সাৰ্য আকাশের প্রতিচ্ছবি । সেদিন আশা এক পাথরের ওপরে বসে খুব কাদছিল। একজন বিকটাকৃতি সাধুপুরুষের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল একদিন এই মরুভূমির ও পাহাড়ের দেশে । তিনি ওকে বলেচেন—পৃথিবীর মৃত্যুর পরে সাত লোক, প্রত্যেক লোকে আবার সাতটা স্তর। প্রত্যেক বার মানুষকে মরে নতুন দেহ ধরে নতুন স্তরে জন্ম নিতে হয় —ইত্যাদি । আশার মাথায় ওসব জটিলতা চোকে না—এক এক সময়ে সে বেশ বুঝতে পারে সে মরেই গিয়েচে বটে। কিন্তু অরেও তো নিস্তার নেই, দুবার তো মরা যায় না—না হয় আবার চেষ্টা করে দেখতে । কোথায় গেল মা, বাবা, স্বামী, ছেলেমেয়ে-এ কি বিত্র জীবন, না আছে আশার আলো, না আছে আনন্দ, না আছে ভালবাসা, স্নেহ, দয়া। কেন মিছে বেঁচে থাকা ? অথচ মরতেও তো পারে না। এ কি ৰন্ধন ! সেই ষে একদিন স্বামীকে সে দেখলে, খেন তার পুরোনো শ্বশুরবাড়ীর ঘরে সে গেল—