পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড 企以 একদিন উমাচরণ মাস্টার মশায় আমাদের বুঝিয়ে বলেছিলেন, বড় বড় লেখকরা সবাই প্রথম জীবনে তার মত ইস্কুল-মাস্টারি করেছিলেন। কথাবার্তার মাঝখানে,আমাদের ক্লাসের সারদা হঠাৎ বলে বসল—আপনার বয়স কত মাস্টার মশাই ? து" —কেন রে ? —তাই বলছি । উমাচরণ মাস্টার তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলেন বটে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারলাম ছেলেটার খটকা বাধছে কোথায়। এই বয়সেও যদি এখন উমাচরণ মাস্টার আমাদের এই স্কুলে মাস্টারি করতে রয়ে গেলেন, তবে কোন বয়সে গিয়ে তিনি কোথায় কি বড় কাজ করবেন ? আমাদের ক্লাসের সতু কিন্তু বলত–মাস্টার মশাই খুব বড় পণ্ডিত । ওরকম হয় না । আমি বললাম~ কেন রে ? —উনি চালতেবাগানের মাঠের ধারে বসে বসে রোজ কি করেন! বোধ হয় লেখেন। কবিমাতুষ কিনী । * আমি একদিন সতুর সঙ্গে দেখতে গেলাম ব্যাপারটা। চালতেবাগান বহুকালের প্রাচীন আম তেঁতুল গাছের ছায়ায় দিনমানেই সন্ধ্যার মত অন্ধকার। অনেক রকম মোটা লতা গাছে গাছে জড়াজড়ি করে আছে। বাগান পার হয়েই একটা ছোট মাঠ, উমাচরণ মাস্টার সেই মাঠের ধারে বসে আছেন, বাগানের ছায়ার আশ্রয়ে একটা ছেড়া মাদুর পেতে । মাদুরের ওপর কাগজ বই ছড়ানো । পাছে উড়ে যায় বলে মাটির ছোট ছোট ঢেলা চাপানো সেগুলোর ওপর । আমরা দেওড়া ঝোপের আডালে দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম, তিনি কখনও উপুড় হয়ে কি লিখছেন, কখনও সামনের মাঠের দিকে চেয়ে কি ভাবছেন, কখনও আপনমনে হাসছেন, বিড় বিড় করে কি বকছেন । সতু সসন্ত্রমে চুপি চুপি বললে—দেখলি ? কবিমাহব ! আমি বললাম—কি করছেন ? —লিখছেন । —বিড় বিড় করে কি করছেন ? —ও রকম কবির করে থাকে । 動 দুজনে চুপ করে দাড়িয়ে কবির কাও অনেকক্ষণ দেখলাম। এই আমার জীবনে প্রথম একজন জীবন্ত কবির ক্রিয়াকলাপ দেখবার দুর্লভ সৌভাগ্য ঘটল। মনে আছে, সেওড়া ঝোপের পাশেই ছিল বড় একটা কতবেল গাছ, তলা বিছিয়ে পড়ে ছিল পাকা পাকা কতবেল। সেই বয়সের লোভ, বিশেষ করে কতবেলের ওপর লোভ দমন করেছিলাম কবি দেখবার আনন্দে ও বিস্ময়ে। উমাচরণ মাস্টারের বয়স তখন কত ? আমার মনে হয় চল্লিশের ওপর। কারণ আমার মায়ের বড় ভাই, আমার বড় মামা-ৰ্ধার বয়স তখন শুনতাম পয়ত্রিশ–তিনি মাস্টার মশায়কে ‘দাদা' বলে ডাকতেন ।