পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড وهوي মুখে অভ্যর্থনা করিলেও মনে মনে সে অত্যন্ত চটিয়া গেল। দিব্য শীতের রাত্রে স্ত্রীর সহিত গল্প জমাইয়া আনিয়াছিল, তা নয়, এখন আবার র"ধ ভাতু, নিয়ে এস জলখাবার— কোথায়ই বা পিঠা, আর কোথায় বা কি ! শ্বশুরগিরি ফলাবার আর সময় পেলেন না। এর চেয়ে সে কাবুলীওয়ালাও যে ছিল ভাল ! না:--এই সব দুবৃত্তের জন্য দুনিয়ায় আর সুখশাস্তি নাই । প্রৌঢ় বলিলেন—বাবাজি, তোমার শ্বশুরের সঙ্গে আমার হরিহরাত্মা ছিল। আমার নাম শুনেছ কিনা জানি না—আমার নাম কৃষ্ণলাল গাঙ্গুলি । ছেলেবেলা থেকে বন্ধুত্ব-তার ছেলেপিলে সব আমার কোলেপিঠে মানুষ। তোমার যখন বিয়ে হয় তখন আমি লাহোরে চাকরি করি, কাজেই আসতে পারিনি । আহা, ছোকরা অল্প বয়সেই মারা গেল । সবই ভবিতব্য ! হরিচরণের বাড়ীর দালান ছিল নিতান্ত ছোট ; পৈতৃক আমলের বাড়ী, অনেকদিন মেরামত হয় নাই। জানালার কবাট খুলিয়া পড়িয়াছে, কোন-কোনটি নারিকেলের ছোবড়ার দড়ি দিয়া গরাদের সহিত বাধা । হরিচরণ কৃষ্ণলালবাবুকে দালানে একটা ছোট টুলের উপর বসাইয়া বলিল—বস্কন, আমি বাড়ীর মধ্যে বলি । কৃষ্ণলালবাবু বসিয়া দেখিলেন, দালানের দরজা জানালা একটাও ভাল অবস্থায় নাই । সবগুলির ফাক দিয়াই হু হু করিয়া হিম আসিতেছে । বন্ধুর এ কন্যাটি সকলের ছোট, তিনটি মেয়ের বিবাহ দিবার পর সর্বস্বাস্ত হইয় তাহার বিবাহ দেন। সে যে ভাল পাত্রে পড়ে নাই তাহা তিনি জানিতেন। কৃষ্ণলালবাবু মনে মনে কষ্ট অনুভব করিলেন । মিনিট চার-পাচ পরে উত্তরদিকের দরজ ঠেলিয়া বীণাপাণি দালানে প্রবেশ করিল। কৃষ্ণলালবাবু তাড়াতাড়ি চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইলেন, বলিলেন—এস এস, বীণু মা আমার এস। ওঃ, সেই তোর বিয়ের আগে মা--তখন আমি - বীণাপানি গলায় আচল দিয়া কৃষ্ণলালবাবুকে প্রণাম করিল। কৃষ্ণলালবাবু তাহার হাত ধরিয়া তুলিলেন—এস এস, সাবিত্রী-সমান হও মা ! দেখি মা বাণু মুখখান তোর, কতদিন দেখিনি । বীণাপাণির মাতাপিত কেহ ছিল না । বাপের বাড়ী ভাইএরা থাকিলেও পিতার মৃত্যুর পর তাহার বড় খোজখবর করিত না । আজ পাচ-ছয় বৎসর সে বাপের বাড়ী যায় নাই বা বাপের বাড়ীর কাহাকেও দেখে নাই। নির্জনে তাহার মায়ের মুখ মনে পড়িত,”বাপের মুখ মনে পড়িত, শৈশবের সাথীদের মুখ মনে পড়িত, উঠানের বকুলতলায় সেঁজুতি ব্রতের কথা মনে পড়িত। তার বিরহী প্রাণটি পুকুরের ঘাটের চালতাতলায়, শত শৈশবের স্মৃতিভরা তাহদের পাড়ার ধূলামাটির পথে পথে, সেই বকুলফুলদের বুকে মুখ লুকাইয়া মনের সমস্ত দুখকষ্ট উজাড় করিয়া দিত—অসহ তৃষ্ণায় । ভাইএরা তাহাব খোজও করে না । সে ভাবিত, আজ মাবাপ বাচিয়া থাকিলে কি তাহাকে এরূপ করিয়া ফেলিয়া থাকিতে পারিতেন ? হাজার হউক, মেয়েমানুষ--অনেক দিন পরে পিতৃসম পিতৃবন্ধুকে পাইয়া তাহার সেই অভিমানই সকলের