পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার ३१ মিস সোরাবজি পুনরায় আবদারের ভঙ্গিতে তাহার মুঠাম শুভ্র গ্রীবাটি জুলাইয়া বলিল— শেখাবেন আমাকে মিঃ রায় ? আমি রোজ আপনার বাসায় আসব এক ঘণ্টা করে ? মুলো পরম উৎসাহের স্বরে বলিল—স্থ্যা হ্যা বেশ, বেশ । g 媳 নবীনদা বাংলায় বলিলেন—ওর তাহলে বড় সুবিধে হয়, দু বেলা দেখা হয় কিনা। মূলোর কাও দেখ—সাধে কি বলে হর্স র্যাডিশ ! মুলো মিল সোরাবজির সঙ্গে কথা কহিতে অন্তমনস্ক ছিল, নবীনদার বাংলা কথা শুনিতে পাইল না—নতুবা বলিত, হোয়াট ? কি বললে বাংলাতে ? আমি ভদ্রতা বজায় রাখিয়া বলিলাম—শেখালে তো বেশ হোত—কিন্তু আমাদের সময় নেই কিনা! দুজনকে টো টো করে সারাদিন নিজের কাজে বেড়াতে হয়, নইলে এ তো বড় আননের কথা । আমরা গোরেওয়ারায় জলে নামিয়া সবাই স্নান করিলাম, মিস সোরাবজি পৰ্য্যন্ত। দুপুর ঘুরিয়া গিয়া একদিকে ছায়া পডিয়াছে—এখনও সেদিনকার সেই দিনটি চোখের সামনে যেন ভাসিতেছে—একদিকে অনুচ্চ কালে পাথবের পাহাড়, অন্যদিকে শিউলি ও তিন্দুক গাছের সারি, দু-দশটা বড় বড় শালও আছে। আকাশে খর রৌদ্র, দুপুরের রোদে ঝক-ঝক-করা চোখ-ঠিকরানো ছোট ছোট ঢেউএর সারি হ্রদের বুকে, অথচ এপারে অনেকখানি ছায়াসিক্ত— জাটলাট স্বানের পোশাকে শুভ্রদেহ কুশাঙ্গী ভেনাসের মত পার্শী তরুণী জালু শৈলবেষ্টিত হ্রদের নীল জল হইতে উঠিতেছে—দূরে ওপরে গোরেওয়ারার উচু পাড়ের উপর একটা বাংলা ধরনের বাড়ী, বোধ হয় এক ডাকবাংলো । আমরা রান্ন। করিয়া রাখিয়া স্নান করিতে গিয়াছিলাম, মিল সোরাবজির নিজের হাতের রান্না ভাত ও ডাল, কিছু মাংস, দু একটা ভাজ। পাশী ধরনের মুন দিয়া রান্না ভাত ও মশলাবিহীন সাদা রঙের মাংসের স্ট ও বেশনে টেমাটাে ভাজ-সবগুলিই আমার মুখে সমান অখাদ্য। ভাগ্যে বুদ্ধি করিয়া নবীনদা কিছু আচার অনিয়াছিলেন—তাই দিয়া গ্রাস-কয়েক ভাত খাওয়া গেদ। মূলে পোষা কুকুরটির মত মিস সোরাবজির পিছনে পিছনে ঘুরিতে লাগিল এবং তাহার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিল। 数 একটা জিনিস লক্ষ্য করিবার মত বটে—দেখিলাম তাহার বাঙালী-প্রতি তাহার প্রণয়িনীর প্রতি ভালবাসা অপেক্ষ কম নয়। বাঙালীর সব-কিছুর সে আজ ভক্ত, আমাদের কত কি ব্যাপারের প্রশংসা সে শতমুখে যদি বলিতে পারিত তাহার প্রণয়িনীর নিকট—তবে যেন তাহার তৃপ্তি হইত। বলিল, জান জালু, ওঁর বাংলাতে মূলো কথার বড্ড ব্যবহার করেন, প্রায়ই ওঁরা বলেন র্যাডিশ—আমি শিখে নিয়েছি, একটা বাংলা ইডিয়ম, মানে ‘খুব ভাল’ । নবীনদা অনুচ্চ স্ববে বলিলেন, মরেছে হতভাগা ! মিল সোরাবজি আমাদের দিকে চাহিয়া কৌতুহলেব স্বরে বলিল—ও হাউ ইণ্টারেটিং! সত্যি মিঃ রায়—আপনারা বুঝি—ইত্যাদি। মেয়েটিকে যা তা বুঝাইয়া ও অন্ত কথা পাড়িয়া চাপা দিলাম জিনিসটা। "