পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছায়াছবি ۔$A —লা, আমি বলবো না । ঠাট্টার ব্যাপার নয় সেটা । তোমরা হাসবে আর আমি ভেবেচ আমার জীবনের অত বড় একটা অভিজ্ঞতা— —আমি কবে আপনাকে ঠাট্টা করেছি এ নিয়ে ? সত্যি বলুন ! - চন্দ্রনাথ কবিরাজের মনটা যেন একটু নরম হয়ে এল। তিনি চ খেতে-খেতে শুরু করলেন নিম্নের গল্পটি। —আমি নিজে যা দেখেচি ত অবিশ্বাস করি কি করে ? ঘটনাটা গোড়া থেকে বলি । পাকিস্তানে আমার বাড়ী ছিল খুলনা জেলার হলদিবুনিয়া গ্রামে। আমার বাবার নাম ছিল vত্রিপুরাচরণ শাস্ত্রী.সেকালের বড় নামডাকওয়াল কবিরাজ ছিলেন তিনি। বাবা বড় কবিরাজ ছিলেন, তার পসার পেলাম আমি । বাবা তখনো বেঁচেই আছেন, তবে কাজকর্ম করেন না । ইদানীং পক্ষাঘাত রোগে এক দিকের অঙ্গ অচল হয়ে গিয়ে শয্যাগত ছিলেন একেবারে । নাম-করা সেকেলে কবিরাজের ছেলে হিসেবে বড়বড় বাধা ঘর ছিল, যারা অমুখ-বিমুখে আমাকে ছাড়া আর কোনো চিকিৎসককে ডাকতো না । to মালমাজীর পাকড়াশী, জমিদার ছিলেন এমন একটি বাধা ঘর। সেবার কার্তিক মাসের শেষে জমিদার হরিচরণ পাকড়াশী ডেকে পাঠালেন–র্তার ছেলের অসুখ । আমি গিয়ে দেখলাম ছেলেটির বিষম জ্বর, যাকে আপনারা বলেন টাইফয়েড। পনেরোষোল বছর বয়েসটা ও রোগের পক্ষে তত স্ববিধাজনক নয়। আমাকে জমিদারবাবু হাতে ধরে অনুরোধ করে বললেন—আপনাকে এখানে থাকতে হবে কবিরাজ মশায়, যা লাগে আমি তাই আপনাকে দেবো। ছেলেকে বাচিয়ে দিন । আমি রোগীর অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। পেট-ফাপ, বুকে সর্দি-কাশি, নাড়ির গতি আপনারা যাকে বলেন ইণ্টারমিটেণ্ট, ভুল বক—সব খারাপ লক্ষণই বর্তমান। বাচানো বড়ই কঠিন। ভগবান ধন্বন্ধুরীকে স্মরণ করে কাজে লেগে গেলাম। সেদিন সন্ধ্যার পর নাড়ির অবস্থাটা ভালো করে আনলাম ! পেট-ফাপাও অনেকটা কমে গেল। ভুল বকুনি থানিকটা কুমলো । আমি খানিকট নিশ্চিন্ত হয়ে বিশ্রাম করতে গেলাম রাত্রি এক প্রহরের পর । পাকড়াশী জমিদারদের বাড়ী দো-মহলা । বাইরে একদিকে দোলমঞ্চ, নাটমন্দির আর গোবিন্দ-মন্দির। ভাইলে সদর-কাছারি আর মহাফেজখানা । মহাফেজখানার দক্ষিণে আমলাদের থাকবার কুটুরি সারি-সারি অনেকগুলি। আমলাদের বাসার পূর্বদিকে বড় পুকুর। এই পুকুরের তিন দিকে বাধানে ঘাট । পুর্ব পাড়ের ঘাট বাইরের লোকদের জন্যে, বাকি দুটি ঘাট আমলাদের জন্তে । বাইরের মহলের মাঝখানে সদর দেউড়ি, এই দেউড়ির দু-পাশে দুই বৈঠকখানা। আমার বাসা নির্দিষ্ট হয়েছিল ব্যদিকের বৈঠকখানার পাশের বড় কুঠুরিতে। সাদা ধবধবে চাদর পাতা, দুটো বড় তাকিয়া, মশারি খাটানে, চমৎকার বিছানা করে