পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S\లి: বিভূতি-রচনাবলী নষ্ট হইয়া গিয়াছে—সেকালের অনেক জানালা-দরজায় চাচের বেড়া বাধিয়া আবরু রক্ষা করিবার বন্দোবস্ত। তবু সেই বাড়ীতেই গদাধর পুত্র-পরিবার লইয়া চিরকাল বাস করিয়া আসিতেছেন। টাকা হাতে থাকা সত্ত্বেও গদাধর বাড়ী মেরামত করেন না কেন, বা নিজের পছন্দমত নতুন ছোট-বাড়ী আলাদা করিয়া তৈরী করেন না কেন ইত্যাদি প্রশ্ন মনে ওঠা স্বাভাবিক ; বিশেষতঃ র্যাহারা বাহিরের দিক হইতে জিনিসটা দেখিবেন । ইহার কারণ আর যাহাই হউক, গদাধরের কৃপণতা যে নয়—ইহা নিশ্চিত । কারণ, গদাধর আদৌ কৃপণ নহেন। প্রতি বৎসর তিনি জাকজমকের সঙ্গে দুর্গোৎসব ও কালীপূজা করিয়া গ্রামের শূদ্রভজ তাবৎ লোককে ভোজন করাইয়া থাকেন—গরীবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণও করেন, সম্প্রতি "কুম্বষ বামনীর দ’র উত্তরপাড়ে একটি বাধানো স্নানের ঘাট করিয়া দিয়াছেন—তাহাতে মিত্রপক্ষর মতে প্রায় তিনশত টাকা খরচ হইয়া গিয়াছে—তবে শত্রুপক্ষ বলে মেজ-তরফ নিৰ্ব্বংশ হইয়া যাওয়ায় উভয় ঘরের স্ববিধা হইয়াছে—ভিটার পুরাতন ইটগুলি সত্যনারায়ণ ও গদাধর মিলিয়া দশহাত বাড়াইয়া লুঠ চালাইতেছে। বিনামূল্যে সংগৃহীত পুরাতন ইটের গাথুনি বাধা-ঘাটে আর কত খরচ পড়িবে ?--ইত্যাদি । স্বাকৃ, এসব বীজে কথা । আসিল কথা, গদাধর গ্রামের মধ্যে একজন সঙ্গতিশালী ও সাহসী লোক। একবার গদাধরের বাড়ীতে ডাকাত পড়িয়াছিল। গদাধর হাকডাক করিয়া লোকজন জড় করিয়া, নিজে রামদা হাতে লইয়া হৈ হৈ শব্দে গ্রাম মাতাইয়া ছুটিয়া ছিলেন, কিন্তু ডাকাতদের টিকিও দেখা যায় নাই । একদিন গঙ্গাধর আড়তে বসিয়া কাজকৰ্ম্ম দেখিতেছেন, কাছে পুরাতন মুহুরী ভড় মহাশয় বসিয়া কাগজপত্র লিখিতেছেন, আজ গদাধরের মনট। খুব প্রসন্ন, কারণ, এইমাত্র কলিকাতার মহাজন বেলেঘাটার আড়ত হইতে সংবাদ পাঠাইয়াছে যে, তাহার পূর্বের পাটের চালানে মণ-পিছু মোটা লাভ দাড়াইবে । গদাধর মুহুরীকে বলিলেন—ভড়মশায়, চালানটা মিলিয়ে দেখলেন একবার ? —আঙ্গে ধ্যা, সাড়ে-সাত আনা খরিদ-দরের ওপর টাকায় দু’পয়সা আড়তাড়ি, আর গাড়ীভাড়া দু’আনা এই ধরুন আট আনা—দশ আনা —ওরা বিক্রি করেচে কততে ? —সাড়ে-চোদ–ওদের আড়তদারি বাদ দিন টাকায় এক আনা • • - —৪ইটে বেশী হচ্চে ভড়মশায়। সিঙ্গিমশায়দের একটা চিঠি লিখে দিন, আড়তদারিটার সম্বন্ধে••• –বাৰু, ও-নিয়ে আরবারে কত লেখালেখি হলো জানেন তো ? ওরা ওর কমে রাজী হবে না—আমরাও অন্ত-কোনো আড়তে দিয়ে বিশ্বাস করতে পারবে না। সব দিক বিবেচনা ক'রে দেখলে বাবু ও-জাড়তদারি আমাদের না দিয়ে উপায় নেই। ওদের চটালে কাজ চলবে না। পূজোর সময় দেখলেন তো ?