পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१७ বিভূতি-রচনাবলী —চলুন জেঠামশাই, একটু বড়দার বাড়ীতে। আপনাকে একটু পায়ের ধুলো দিতে হবে সেখানে । তারা বলেছে । --আমি যাব ? কান্নাকাটির চাপা শব্দে বলতে লাগলেন—কি রে? অ হরিশ, কি রে ? কিসের শব্দ ? সন্ধ্যায় আমরা বাড়ী এসে ঠাকুরদাদাকে ঘিরে বসি । হঠাৎ আমার বড় মুমতা হল ঠাকুরদাদার অসহায় মুখের দিকে চেয়ে । নতুন কেমন একটা মমতা—যা এতদিন মনের মধ্যে খুজে পাই নি । বাসা খড়গপুরে সভ করতে গিয়েছিলাম। বৈশাখ মাস, বৃষ্টি হয় নি প্রায় সারামাস, তার ওপর খড়গপুর শহরের গরম । গাছ নেই পালা নেই—ছোট্ট ছোট্ট রেলওয়ে কলোনির বাসাঘর, সামনে দিয়ে ড্রেন চলে গেছে, ময়লা জলে ভৰ্ত্তি । চার নম্বর বাসায় তবুও যা হয় লোক একরকম বাস করতে পারে, তিন নম্বর বাসায় কষ্ট্রেস্থষ্টে চলে, কিন্তু দু নম্বর এবং এক নম্বরের বাসা যে হতভাগ্য লোকেদের জন্যে তৈরি হয়েছে, তারা পশুজীবন যদি যাপন করত অরণ্যে, এর চেয়ে অনেক ভাল থাকতে পারত, ভগবানের আলো-বাতাস থেকে এভাবে বঞ্চিত হত না । এক ভদ্রলোকের বাড়ী অতিথি হয়েছিলাম। তিনি কি-একটা ভাল কাজ করেন, চার নম্বর বাসায় বাসের অধিকার পেয়েছেন । সেই নীচু নীচু ছোট ছোট ঘরে তার স্ত্রী কাপেটের ওপর ফুল-বসানো অক্ষরে 'পতি পরম গুরু" লিখে বাধিয়ে রেখেছেন। ডিশ, পেয়ালা, পুতুল, মাটির ময়ুর সাজিয়ে রেখেছেন কাচের আলমাতি দেওয়ালে টাঙানো আছে সানলাইট সাবানের ক্যালেণ্ডার এবং মহাত্মা গান্ধীর ছবি, রালীলা ও চৈতন্যদেবের সংকীৰ্ত্তনের ছবি ; কোথাকার মজুরেরা এক বিদায়-অভিনন্দন দিয়েছিল বাড়ীর কৰ্ত্তাকে, সেখানা বাধিয়ে টাঙানো —ইত্যাদি। হাওয়া আসে সামান্ত, বৈশাখের উত্তাপে নীচু কংক্রিটের ছাদ আগুনের খাপরার মত গরম হয়েছে, হাত-পা নাড়ার স্থান নেই বাসার মধ্যে, গরমে ইপি ধরে যায়। চোখের দৃষ্টি সৰ্ব্বদা দেওয়ালে বেধে যাচ্ছে । আমি বললাম—কি করে থাকেন এখানে ? গৃহস্বামী বললেন—কি করি বলুন। চাকরি । —কত বছর আছেন ? —১৯২৭ সালে জয়েন করেছি। তাহলে হিসেব করুন। এই একুশ বছর চলছে। —বরাবর এই বাসায় ? -