পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী سوالاeن বাড়ীর তৈরি ক্ষীরের সন্দেশ ও আচার। পথে যোগাড় করে নিলাম বড় বড় ভাসা আমলকী, পাকা বনভুমুর, কাচড়াদাম শাক । বর্ষার দিনে পথের এই সৌন্দর্ঘ্যের তুলনা হয় না। সেদিন ভাবছিলুম আজ এ বন যেন শেষ না হয়। শেষ হলেই তো এ মায়া ফুরিয়ে যাবে। আবার পড়বে লোকালয়, তখুনি শুরু হবে ব্লাকমার্কেট, খবরের কাগজ, হস্তায়-একদিন-ভাত-খেওনাউপদেশ, উদ্বাস্তু-সমস্ত। এই রকম মায়া জগতের মধ্যে দিয়ে যতদিন চলে চলুক গাড়ী। বেলা বারোটা । g একটা কি বন্য নদী বনের ছায়ায় ছায়ায় ছোট জলপ্রপাত তৈরি করে লাফাতে লাফাতে ছুটে চলেচে । বর্ষার উচ্ছল জলস্রোতে প্রাণবন্ত । বল্লাম সঙ্গীকে—কি নদী মশাই ? —কোয়েল নদীর শাখা । —দক্ষিণ কোয়েল ? —নিশ্চয় । এই নদীর জলে এক রকম পাথর পাওয়া যায়, বেশ মন্দর রং । আপনাকে দেখাবো.মনে হবে হাইনিজ জেড়, আস্থন আগে একটা বড় পাথর আছে—তার ওপর বসে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে। —আপনি কতবার এসেচেন এদিকে ? —ভৈরব থানের সাধুজির সঙ্গে দেখা করতে চারবার এসেচি। দেখবেন, তিনি সাধারণ সাধু নন । ভক্তি হবে আপনার । —এমনকি আপনারও বলা উচিত ছিল বোধ হয় । আমার মতামত তো কাল শুনলেনই । সেই প্রকাও পাথরখানাতে একটা শতরঞ্জি বিছিয়ে আমরা বসে পড়লুম। ক্ষুধার উদ্রেক হয়েছিল এ উক্তি আমাদের পেটের অবস্থার তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল ও অবাস্তব। ক্ষুধায় আমাদের পেটের ভেতরটা দাউ দাউ করে জলছিল। এ দেশের জলের গুণ আছে বটে। জানুনন্দো ভূগছিলাম গত একবছর, ক্ষুধাবোধ একেবারে ছিল না। বেশ পেট ভরে চিড়ে, ই ও ফল খেয়ে ঝর্ণার নিৰ্ম্মল জল পান করে আবার গাড়ী ছেড়ে দিলাম। এবার অনেকটা * আমরা ছেঁটে গেলাম—কেননা সব সময় গরুর গাড়ীতে যাওয়া বড়ই কষ্টকর। ছায়ালিস্ক বনবাবিতে কতকুহুম ছড়িয়ে দিয়েচে ঠাণ্ড বাতাসে, অলস হয়ে এসেচে মধ্যাহটি, এই দীর্ঘ অবকাশমুখর নিভৃত, নির্জন, অরণ্যপথে, কুঞ্জনবনে শুধু পাখীর মেলা, শুধুই সাদা মেঘের উড়েকওর মাথার ওপরকার নীল আকাশের মাঝখানে, শুধুই যুযুৱ ভাক দূরে দূরে গাছপালার মগডালে ! বর্ষার মেঘ ওঠেনি তাই রক্ষে । একটু কথা আমার মনে হচ্ছিল। নাগরিক জীবন থেকে বহু দূরের এই সব বনপথ সম্পূর্ণ নিরাপদ। চুরি ডাকাতি এখানকার লোকেরা জানে না। সঙ্গী বজেন—এদের কাছে টাকার বক্স রেখে যাবেন, চেনেন না চেনেন, এসে আবার নিয়ে যাবেন—আমি জানি । Lateখাটে মেরে ধরে নেয় না ? রিভলবার নেই ? হাতবোমা নেই? জিপ নেই ?