পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 0३b মাঝি কিছু না বলে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে। ডাঙার দিকে শিমূলতলায় জলচুড়ির দামে একটা মড় আটকে রয়েচে । পাখানা উচু হয়ে আছে আকাশের দিকে। হাটু মুড়ে যেন দুপুরের আহারের পর বিশ্রাম করচে। একটা চওড়া ঘাসের ডগা ওর সাদাটে ছাত-ধরা হঁ-করা মুখের মধ্যে । মড়াটার ওপরকার ডাঙার শিমূল গাছটাতে শকুনি বসে। ওর মনটা ছাৎ করে উঠলো। এসব বড় অলক্ষণ । কেন ওটা দেখলে সে ? এই ভরা সন্দেবেলাতে ওটা দেখবার কি দরকার ছিল ? বামে শব শিব কুম্ভ, झक्रि१ c*ों, भू१ों, छिछ । আচ্ছা মড়াটা যখন প্রথম দেখলে তখন মড়াটা ওর কোন দিকে ছিল । বা দিকে। বঁ। দিকে—না ডান দিকে ? না, বা দিকেই। —এই বাবু চন্দনতলার ঠাকুরবাড়ীর ঘাট । —সে কি ! তাহলে তো বেশি দূর নেই! মনে মনে সে চন্দনতলার জাগ্রত কালীঠাকুরের কাছে কত প্রার্থনা করলে । খোকা যেন ভালো থাকে, গিয়ে যেন ওকে ভালো দেখতে পায় লে। আর বেশি দূর নেই। ওর বুকের কাছে কি যেন দুলে উঠলো। আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডলের অগ্নিরেখা বিরাট প্রশ্ন নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এসে গেল ওদের গ্রামের ঘাটে। এবার খোকার সঙ্গে দেখা হবে । কতদিন খোকাকে সে দেখেনি। ওর মুখ যেন আর স্পষ্ট মনে পড়ে না । খোকার মূখ যেন সে ভুলে গিয়েছে। খোকার মুখের কথা এতদিন যেন আরব্য রজনীর উপকথা ছিল— আজ তা কি এতকাল পরে বাস্তবে রূপ নেবে ? সত্যিকার খোকা ওর সামনে এসে দাড়াবে ? স্বপ্নের খোকা নয়, কত বিনিদ্র রজনীর স্বপ্নের সঙ্গে তার তফাৎ থাকবে তো ? এই পরম ছুটির জন্যে যেন বিশ্ব স্বষ্টি। সমস্ত বিরাট নভোমণ্ডলের ঘূর্ণ্যমান নেবুলারাজি, মৃগশিরা, সপ্তর্ষি, শুকতারা, কালপুরুষ, সব নিজ নিজ কুক্ষে ভ্রমণশীল, শুধু তার এই পরম মুহূর্তটি সম্ভব ও দার্থক করে তুলবার জন্যে। নইলে ওসব অসার, মিথ্যে, অর্থহীন। প্রেম নেই যে বিশ্বে, সেটা আবার কি একটা বিশ্ব ? সে ধুমভস্ম হয়ে মহাবোমে মিলিয়ে যাক না, কে দেখচে । কিসের লক্ষকতা ওর অস্তিত্বের ? সৰ্ব্বংসহ ধরিত্রীমাতার কোলে যাপিত এই মধুর মুহূৰ্ত্তগুলি প্রেমের বাণ দিক থেকে দিগন্তরে, নীহারিক থেকে নীহারিকান্তরে, এক নাক্ষত্রিক দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে হড়িয়ে পড়চে, তাই বিশ্ব বেঁচে আছে, বিশ্ব দীর্ঘজীবী হয়ে আছে। নতুবা বিশ্ব নাভিশ্বাস তুলে খাবি খেতে । ওদের পাড়ার ঘাটে নৌকো লাগলো। কচুবনে ঝি ঝি ডাকচে । অন্ধকার বাশবনের মধ্যে দিয়ে পথ। শেয়াল ডাকলো কেন ? শেয়াল ডাকা কি ভালো ? জোনাকি জলচে তেলাকুচোর ঝোপে।