পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 88) একদিন গাইলে ওদের বাড়ীর উঠোনে। কলকাতা থেকে যে সব আত্মীয়বন্ধু এলো, তাদের সোনার চেন, ঘড়ি আর ডবল-ব্রেস্ট শার্টের বাহার দেখে আমাদের চোখ ধাধিয়ে গেল । পুরুষমানুষ যে গলায় সোনার হার পরে, সেই আমরা প্রথম দেখলাম । এসব হল আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেকার কথা । তারপর বছর তিনেক কাটলো। সতীশ তখন ব্যবসায়ে ঢুকেচে । দেশের সম্পত্তি দেখাশোনার ভারও নাকি তার ওপর। সে উপলক্ষে সতীশ একটু ঘন ঘন দেশে আসতে লাগলো। আমাদের অনেক বড়, আমরা সমীহ করে কথা বলতাম। ও কখনো নিয়ে আসতো কলের গান—তখন নতুন জিনিস—এসব পাড়াগায়ে আনকোরা নতুন । বৈঠকখানায় বসে যখন কলের গান বাজাতো, তখন লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতে । কেউ হয় তো জিগ্যেস করতো–কলের কত দাম খোকাবাবু ? —সাড়ে তিনশো টাকা । - সতীশ সংক্ষেপে উত্তর দিয়েই আর একখানা রেকর্ড তুলে দিতো কলে। নরম বুরুশ দিয়ে আগের রেকর্ডখন যত্ন করে মুছতো । আমাদের বলতো–কাছে এসে ভিড় কোরো না, দামী জিনিস সব ! একখানা ভেঙে গেলে সাড়ে পাচ টাকার ঘাড়ে জল— আমরা সভয়ে সরে যেতাম । সতীশের গায়ে সিস্কের শার্ট, সব আঙ লগুলোতে আংটি, ঘাড়-কামানো বাৰু-ছাট চুল, রুমালে বিলিতি এসেন্স, মুখে বার্ডসাই। তখনকার দিনে সিগারেটের ওই নাম ছিল। আমরা বলতাম—ওর দাম কত সতীশদা ? —সাড়ে তিন টাকা কোঁটে । —তুমি রোজ রোজ খাও ? —তিন দিন যায় এক কোঁটোয়। মাসে পয়ত্রিশ টাকা লাগে । এ অবস্থায় কিছু কিছু মোসাহেব জুটে গেল। তাদের নিয়ে যে ক'দিন বাড়ী থাকতে খুব হৈহৈ করতো। আজ নৌকোয় উঠে বাচ, খেলা, কাল দল বেঁধে বন-ভোজন। ওর বাড়ীতেও মাঝে মাঝে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেী—মাংস লুচি দই মিষ্টি । আমরা অবিধি বাদ পড়তাম, কারণ বড়লোকের ছেলের অন্তরঙ্গ বন্ধু হওয়ার আনুষঙ্গিক গুণ আমাদের ছিল না, বয়সও ছিল কম। 畿 তারপর স্কুলে ভৰ্ত্তি হয়ে পড়াশুনো করতে ব্যস্ত হয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে সাতকড়িবাবুর মৃত্যু হল। গ্রামে ধুমধাম করে তার শ্রাদ্ধ করলে নিবারণ এসে । ইউরোপের প্রথম মহাযুদ্ধ উপলক্ষে ওদের ব্যবসা নাকি খুব ভাল চলছে। বেশ মোটা টাকা লাভ হচ্ছে লোহার বাজারে । তখন স্কুলে ওপর-ক্লাসে পড়ি, মনে তত সঙ্কোচ নেই, একদিন নিবারণ কৰ্ম্মকারের কাছে গিয়ে বসলাম। যেমন হয়ে থাকে, তার বৈঠকখানায় গ্রামের অনেক লোক, কেউ চা খেতে, কেউ । মন রাখতে ।