পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ფé&) বিভূতি-রচনাবলী অশ্বিনী মৃদ্ধ হেসে (তাও মুরুবিয়ানা চালে, আগেকার সে অশ্বিনী যেন আর নেই) পাখোয়াজ ধরে এগিয়ে নিয়ে বসলো । কানে কানে কথা ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে, সাজম্বর থেকে পৰ্য্যস্ত যাত্রা দলের লোক এসে ফটকের কাছে জড়ো হয়ে কৌতুহলে অশ্বিনীর বাজানো দেখতে ভিড় করলে। বাজনাও বটে অশ্বিনীর । বাপের বিষয় উড়িয়ে ফুৰ্ত্তি করবার সময়ে গানবাজনার দিকেও একটু-আধটু মন দিয়েছিলাম, খুব বেশি না বুঝলেও গানবাজনা সম্বন্ধে নিতান্ত অৰ্ব্বাচীন নই। পাখোয়াজ ধরে অশ্বিনী যখন ঘা দিতে লাগলো, তখন যেন মনে হল, গুরু গুরু শব্দে মেঘগর্জন হচ্চে কোথাও আকাশে । মেঘে মেঘে তার ধ্বনি, ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনি। আসর এক মূহূর্তে জমে গেল। স্তব্ধ হয়ে গেল লোকজনের কোলাহল । সবাই উৎসুক নয়নে চেয়ে দেখচে, সবারই কানে গিয়েচে—এই যে-লোকটি পাখোয়াজ বাজাচ্চে, উনিই অশ্বিনীবাৰু স্বয়ং। লোকের দৃষ্টিতে কি ঔৎসুক, কি আনন্দ, মুখে কি সন্ত্রম আর শ্রদ্ধা! আমি শিল্পী নই, কিন্তু ওস্তাদ শিল্পীর প্রতি এই মৌন শ্রদ্ধা আমার অন্তর স্পর্শ করলে। আমি নিজেও গৰ্ব্ব অনুভব করলাম যে, অশ্বিনী আমার বাল্যবন্ধু । এতক্ষণ একে ভিখিরি অবাই দাস বেষ্টিমের ছেলে বলে মনে মনে যে অবজ্ঞার ভাব পোষণ করেছিলুম, তার স্থান অধিকার করলে ওর প্রতি একটা গভীর শ্রদ্ধা ও বিস্ময় । এই বিস্ময়টা যেন আমি কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না । এই সেই আশ্বিনী, অবাই দাসের ছেলে, দোচালা ঘরে বাস করতো, ভিক্ষে করে সংসার চালাতে ওর বাপ-মা । অশ্বিনীর বাজনা থামলে পাখোয়াজ-বাজিয়ে ওর পায়ের ধুলো নিয়ে বল্লে—আশীব্বাদ করুন যেন আপনার মত হাত হয় । ম্যানেজার গদগদ কণ্ঠে বল্লে—সোনা দিয়ে বঁধিয়ে রাখতে হয় হাত আপনার । দয়া করে একবার ডুগিতবলাটা— অশ্বিনীকে এতক্ষণ দু'দিক থেকে দু'জনে পাখার বাতাস করেচে। আসরে বড় গরম। পাখোয়াজ-বাজনার শ্রমে অশ্বিনী ঘেমে উঠেচে । গ্রামের জমিদারের ছেলে আমি, ওর পাশে বসে নিজেকে নিতান্ত নগণ্য মনে করতে লাগলুম। পালা আরম্ভ হয়ে গেল। অশ্বিনী ওদের অনুরোধে বার-কয়েক পাখোয়াজ আর ভুগি-তবলা বাজালে । ওস্তাদের হাত দেখলুম বটে ওর সমস্ত বাজনার মধ্যে । - o তৃতীয় অঙ্কের শেষে দুজনে বার হয়ে এলুম ফাকায়। অখিনী বন্ধে–বাৰু, এবার একটু চলবে ? —না ভাই। আমায় অনুরোধ কোরো না । —কি খাবেন ? —কিছু থাবো না । চল একটু চা খাই। —উছ, ওতে আমার মৌতাত থাকবে না। আপনি খান। আসরে ওরা বাজাতে বলৰে। সাল চোখে হাত খোলে না— আমি কৌতুহলের স্বরে বল্লাম—অশ্বিনী, আজ বড় আনন্দ পেলাম। কতদিন তোরা গ্রাম ছেড়েছিল, তোদের কোনো সংবাদও পাইনি—তুই যে এত বড় হয়ে উঠেছিল