পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిరి বিভূতি-রচনাবলী দিন দুই পরে বৌদিদি দুপুরবেলা ওদের রান্নাঘরে একটা ঘড়া আনতে গিয়েচেন । জ্যাঠাইম বলেচেন—ওখানে দাড়াও, দাওয়াটাতে—আমনি হট করে ঘরে ঢুকলে যে ? বৌদিদি অবাক হয়ে বাইরে গিয়ে দাড়িয়েচেন, জ্যাঠাইমা ঘড়া বার করে দিয়েচেন দাওয়াতে। বৌদিদি নিয়ে এসেচে। কিন্তু বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা কি, বুদ্ধিমতী মেয়ে হ’লে তখনই বুঝত । * এ-কথা তখন সে কাউকে বলেনি । - পরদিন মেজকাক। আমার ডেকে বললেন—একটা কথা আছে, শোন । তোমার মায়ের কাজটা এখানে না ক’রে অন্ত জায়গায় গিয়ে করে । মানে তোমার দাদার বৌয়ের এখানে তো পাকস্পর্শ হয়নি, বড়দাদাও নেই বাড়ি–এ অবস্থায় শ্রাদ্ধের সময় কেউ খেতে আসবে না। তোমার দাদার বৌকে আমরা সে-ভাবে ঘরে তো নিইনি। এই বুঝে যা হয় ব্যবস্থা করে । বলে তোমার দাদাকে । তলায় তলায় এরা সীতার স্বামী গোপেশ্বরকে কি পরামর্শ দিয়েচেন জানি নে, সে হঠাৎ বেঁকে দাড়িয়ে বললে চতুর্থীর শ্রাদ্ধ সীতাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে করবে—অথচ আগে ঠিক হয়েছিল চতুর্থর শ্ৰাদ্ধ এখানেই হবে। কালই শ্রাদ্ধের দিন, সুতরাং আজই সে সীতাকে নিয়ে যেতে প্রস্তুত হ’ল । এর কোনও দরকার ছিল না, সীতা এখানে শ্রাদ্ধ করলে তাতে কোন দোষ সমাজের মতেও হবার কথা নয়—কিন্তু সে কিছুতেই কথা শুনলে না ; এই অবস্থায় বৌদিদিকে পেয়ে সীতা অনেকটা সাত্বনা পেয়েছিল—কিন্তু সে ওদের সইল না। বৌদিদির সঙ্গে সীতার বেশী মেশামেশিট যেন গোড়া থেকেই আমার ভগ্নীপতি পছন্দ করে নি। নিজেই হোকু আর ওদের পরামর্শেই হোক্ । যাবার সময় সীতা বৌদিদির গলা জড়িয়ে কাদতে লাগল। আমায় আড়ালে বললে— ছোড়দা, আমায় বনবাসে ফেলে রেখে ভুলে থেকে না যেন, মাঝে মাঝে আসবে বল ? আর শোনো, বৌদি বড্ড ভালমান্বষ, ও এখনও জানে না যে ওর জন্তেই মায়ের কাজ এখানে করতে দিচ্চে না ওরা। এ কথা যেন বৌদিদির কানে না যায়, ব’লে দিও দাদাকে। বৌদিদিকে বুঝিয়ে দেওয়া হ’ল এখানে শ্রাদ্ধ করতে খরচ বেশী পড়বে, কারণ জেঠামশায়দের নাম বেশী, লোকজন নিমন্ত্রণ করতে হয় অনেক । গঙ্গাতীরে শ্রাদ্ধের কাজ করলে অনেক কম খরচ হবে। বৌদিদি তাই বুঝে গেল । যাবার সময় আমাদের ঘরের চাবিটা ছোটকাকীমার হাতে দিয়ে বললুম—এ বাড়িতে আর কাউকে আপন বলে জানি নে, কাকীমা। সীতার খোজখবর মাঝে মাঝে একটু নিও—ওর তো এ বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক একরকম মিটেই গেল । ছোটকাকীমার চোখে জল এল। বললেন—আমার কোন ক্ষমতা নেই, নইলে নিতুর বোঁকে এ বাড়ি থেকে আজকে অন্ত জায়গায় যেতে বলে ? আমি বললুম—সে কথা বলে না কাকীমা। আমরা এখানে এসেছিলাম প্রার্থ হয়ে, পরের দয়ার ওপর নির্ভর করে। এখানে কোন অধিকার নেই আমাদের । কাকীমা বললেন—তুই ও কি কথা বলচিস জিতু ? এ তোদের যে সাতপুরুষের ভিটে । জায়গা-জমি আর দুখানা ইট থাকলেই বা কি, আর গেলেই বা কি ? এ ভিটেতে হারুর কি যোগেশের যে অধিকার, তোদের দু-ভায়ের তার চেয়ে এক চুল কম নয়। ছোটকাকীমার এক মূৰ্ত্তি দেখেছিলাম বালো, এ আর এক মূৰ্ত্তি। এই একজনই এ-বাড়ির মধ্যে বদলে গিয়েচে একেবারে। গাড়িতে যেতে যেতে সেই কথাটা বার বার মনে হলচ্ছি।