পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ e ) মিথ্যে, ও দিব্যাঙ্গনারাও মিথ্যে । মালতী এইখানেই আছে, কাছে কাছেই আছে, তাকে আরও কতবার দেখবো । মালতী আসবে তো ? মালতী সকালে একরাশ তুলো পিজতে বসল। বেলা এগারটা পৰ্য্যন্ত সে আর কোনো কাজে গেল না। প্রথম এখানে এসে যে প্রৌঢ় বৈষ্ণবটিকে দেখেছিলাম, তার নাম উদ্ধবদাস– সেই লোকটিই মালতীর অভিভাবক, কাৰ্য্যতঃ কিন্তু মালতীর খেয়ালে তাকে চলতে হয় । সেও মালতীর কাছে বসে তুলো পিজতে ব্যস্ত আছে, মালতীর কথা ঠেলবার সাধ্য তার নেই। মালতীর ইতিহাস উদ্ধবদাসের মুখে একদিন ইতিমধ্যে শুনলুম। উদ্ধৰ বাবাজীকে একদিন আখড়ার বাইরের মাঠে নিয়ে গিয়ে কৌশলে ঘুরিয়ে মালতীর কথা জিজ্ঞেস করতেই ও বললে —ওর বাবা আমার পাঠশালার পোড়ো বন্ধু। ওরা ব্রাহ্মণ, এ দেশের সমাজে কুলীন । মালতীর ঠাকুরদাদা শ্ৰীধর মুখুটি বেশ নামকরা কীৰ্ত্তন-গাইয়ে ছিলেন । নিজের দল ছিল । দু-পয়সা হাতে করেছিলেনও । একদিন রাত্তিরে বাইরে বেরুচ্চেন, দরজার চৌকাঠের কাছে বাডির বেড়ালটা যেন কিসের সঙ্গে খেলা করছে। ফুটফুট করছে অনন্তচতুর্দশীর রাত, ভাদ্র মাস যেমন বাইরে পা দিতে গিয়েছে অমনি সাপে ছোবল দিয়েছে পায়ে । সাপ ছিল চৌকাঠের বাইরে, আলো-আঁধারে লেগে বুড়ে তা টের পায় নি। ‘ ঘরে তখন ছেলের বেী মালতীর মা, মালতীর বাবা বাড়ি নেই। চে চয়ে বললেন –বেীমা, শীগগির আলো জালে, আমায় একগাছা দড়ি দাও শীগগির। দড়ি নিয়ে বাধন দিয়ে উঠোনে গিয়ে বসলো। বললে —আমায় আর ঘরে যেতে হবে না বৌমা, তলব পড়েছে। লোকজন এল, ঝাড়ানো হ’ল— কিছুতেই কিছু হ’ল না, ভোররাত্রে মারা গেল । মালতীর বাবা পৈতৃক কিছু হাতে পেয়ে একটা লবণ-কলায়ের দোকান করলে । তার মত অতিথিসেবার বাতিক আমি কখনও কারও দেখি নি । দোকান তো ছাই, বাড়ি হয়ে উঠল একটা মস্ত বড় অতিথিশালা। যত লোকই বাড়িতে আমুক, ফিরতো না । একবার রাতদুপুরের সময় পচিশজন সাধু এসে হাজির, গঙ্গাসাগর যাচ্চে, অনেক দূর থেকে শুনে এসেছে এখানে জায়গা পাবে। দোকানের জিনিসপত্র ভাঙিয়ে পচিশমূৰ্ত্তি সাধুর সেবা হ'ল। সকালে তারা বললে, আমাদের জনপিছু দুটাক প্রণামী দাও। অত টাকা নগদ কোথায় পাবে ? সাধুরা বললে—ন দাও তো অভিসম্পাত দেবে। আমি বললাম—মিতে, অভিসম্পাত দেয় দিক, টাকা দিও না ওদের। ওরা লোক ভাল না। সে বললে—অভিসম্পাতের ভয় করি নে, তবে আমার কাছে চেয়েছে, আমি যেখান থেকে পাই, নিয়ে এসে দেবোই। মালতীর মায়ের কানের মাকৃড়ী আর ফাদি নৰ্থ শ্ৰীমন্তপুরের বাজারে বিক্ৰী ক'রে টাকা নিয়ে এল। তাতেও কুলোয় না, আমি বাকী সাতটা টাকা দিলাম—তবে সাধুরা বিদের হয়। মালতী তখন ছোট, একদিন হঠাৎ স্ত্রীকে এসে বললে—ষ্ঠাখ শার সংসারে থাকবে না । স্ত্রীও বললে—আমায় সঙ্গে নাও । স্ত্রীকে বললে—বশিবাগানে ওই হাড়িটা পড়ে আছে, নিয়ে এসে ধুয়ে ওতে ভাত রাধে। খেয়ে চলে। লবণ-কলাইয়ের দোকান বিলিয়ে দিলে। ডোমপাড় থেকে সবাইকে ডেকে নিয়ে এসে বললে—যার যা খুশী নিয়ে যাও। দশ মিনিটের মধ্যে দোকান সাক্ষ, । সবাই বললে—পাগল হয়ে গিয়েছে। তার পর বে। আর মেয়ের হাত ধরে কোথায় চলে গেল। বছর দুই পরে এসে এই লোচনদাস বাবাজীর আখড়ার উঠলো। বাবাজী তখন বুড়ো হয়েছেন, বড় ভালবাসতেন, তিনি বললেন—বাবা, মহাপ্রন্থ তোমায় পাঠিয়ে দিয়েছেন, আমার আখড়ার ভার তোমার নিতে হবে, আমি আর বেশী দিন নয়। পরের বছর বাবাজী দেহ রাখলেন, ওই পুকুরপাড়ের তমালতলায় তাকে সমাধি