পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ Σ Σ Σ মালতী উজ্জল খামাদী বটে, কিন্তু বেশ মুত্র। ওর টান করে বাধা চুল ও ছেলেমান্বষের মত মুখস্ত্রর একটা নবীন, সতেজ মুকুমার লাবণ্য—বিশেষ করে যখন মুখে ওর বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেয়, কিংবা একটা অদ্ভুত ভঙ্গীতে মুখ উচু করে হাসে—তখন সে বিজয়িনী, তখন সে পুরুষের সমস্ত দেহ, আত্মাকে সুন্দরী মৎস্যনারীর মত মুগ্ধ করে কুলের কাছের অগভীর জল থেকে টেনে বহুদূরের অথৈ জলে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ওর সেরূপ যখন তখন দেখা যায় না । কালেভদ্রে দৈবাৎ হয়ত একবার চোখে পড়তে পারে। আমি একবার মাত্র দেখছিলুম। সেদিন সন্ধ্যার পরে সারাদিন খররৌদ্র ও গুমটের পরে উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে মেঘ উঠে সারা আকাশ জুড়ে ফেললে এবং হঠাৎ ভীষণ ঝড় উঠল। আখড়ার বাইরের মাঠে কাঠ, ধান, ছোলা, তুলে সব রোদে দেওয়া ছিল। কেউ তোলে নি, আখড়ায় আবার ঠিক সেই সন্ধ্যার সময়টাতে লোকজন কেউ নেই। আমিও ছিলাম না । মাঠের মধ্যে বেড়াচ্ছিলাম—ঝড় উঠতেই ছুটে এসে দেখি মালতী এক মহাব্যস্ত অবস্থায় জিনিসপত্র তুলছে। আমায় দেখে বললে —দৌড়ে আলোটা জেলে আমুন, অন্ধকারে কিছু কি ছাই টের পাচ্ছি—সব উড়ে গেল— সঙ্গে সঙ্গে এল বৃষ্টি - ওকে দেখলাম নতুন চোখে । কোমরে কাপড় জড়িয়ে সে একবার এখানে একবার ওখানে বিদ্যুতের বেগে ছুটােছুটি করতে লাগল—অদ্ভুত কাজ করবার শক্তি—দেখতে দেখতে সেই ঘোর অন্ধকার আর ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ক্ষিপ্ৰ নিপুণতার সঙ্গে অৰ্দ্ধেক জিনিস তুলে দাওয়ায় নিয়ে এসে ফেললে। এদিকে আমি অন্ধকারে দেশলাই খুঁজে পাচ্ছি নে দেখে ছুটে এসে বললে—কোথায় দেশলাই রেখেছিলেন মনে আছে ? কোথা থেকে হাতড়ে দেশলাই বার করলে—তার পরে সেই ঝড়ের ঝাপটার মধ্যে আলো জালা—সে এক কাণ্ড । অন্ধকারে দুজনে মিলে অনেক চেষ্টার পরে শেষে ওরই ক্ষিপ্রতা ও কৌশলে আলে জলল । আলো জেলে আমার হাতে দেশলাই দিয়ে আমার মুখের অসহায় ভঙ্গীর দিকে চেয়ে গলা কেমন এক ধরনের উচু করে হেসে উঠল—ছুটোছুটির ফলে কানের পাশের চুল আলুথালু হয়ে মুখের দু-পাশে পড়েছে, ফুল্ল শ্রমোজ্জল গণ্ডদেশে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখে উজ্জল কৌতুকের হাসি—দুজনে মিলে আলো ধরাচ্ছি, ওর মুখ আমার মুখের অত্যন্ত কাছে—সেই মুহূৰ্ত্তে আমি ওর দিকে চাইলাম—আমার মনে হ’ল মালতীকে এতদিন ঠিক দেখি নি, আমি ওকে নতুন রূপে দেখলাম, ওর বিজয়িনী নারী রূপে। মনে হ’ল মালতী সত্যিই সুন্দরী, অপূৰ্ব্ব সুন্দরী। –কিন্তু বেশীক্ষণ দেখার অবকাশ পেলাম না ওর সে রূপ। আলো জেলেই ও আবার ছুটল এবং আমার আনাড়ি-সাহায্যের অপেক্ষা না ক’রেই বাকী জিনিস আধ-ভেজা, আধ-শুকনো অবস্থার অল্প সময়ের মধ্যে দাওয়ায় এনে জড় করলে।” এক দিন পুকুরে সকালের দিকে ঘড়া বুকে দিয়ে সাতার দিতে দিতে মালতী গিয়ে পড়েছে গভীর জলে । সেই সময় আমিও জলে নেমেছি । আমি জানতাম না যে ও এ-সময়ে নাইতে এসেছে, কারণ সাধারণতঃ ও স্বান করে অনেক বেলায়, আখড়ার কাজকৰ্ম্ম মিটিয়ে । নাইতে নাইতে একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনে চেয়ে দেথি মালতী নেই, তার ঘড়াও নেই। আমি প্রথমে ভাবলাম মাঝপুকুরে ইচ্ছে ক'রে ডুব দিয়েছে বোধ হয়। বিশেষতঃ সে সাতার জানে—কিন্তু খানিক পরে যখন ও উঠল না, তখন আমার ভয় হ’ল, আমি তাড়াতাড়ি সেখানটাতে সাতার দিয়ে গেলাম, হাভড়ে দেখি মালতী নেই, ডুব দিয়ে এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে ওকে পেলাম —চুলে কাপড় জড়িয়ে গিয়েছে কেমন বেকায়দার, অতি কষ্টে তাকে ভাসিয়ে নিজে ডুবে জল