পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী 9\ט\כי রান্নাঘরের দাওয়ায় পেতে দাড়িয়ে থাকতেন মায়ের ভাতের জন্তে । মায়ের ঘরে থাকতেন ব'লেই বোধ হয় ইদানীং তাকেও আমাদের ঘরে-দোরে উঠতে দেওয়া হত না । মায়ের ঘরে দিদিম যা কিছু করবার সব করতেন, এজন্তে র্তাকে কেউ ছুতো না, তিনি ভাত খেতেন রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে, নয়তে উঠানের পেয়ারী-তলায় বসে। তিনি থাকতেন এ বাড়িতে চোর হয়ে। মায়ের অমুখের কি ওষুধপত্র নিয়ে কথা বলতে যেতে ঠাকুরমার কাছে র্তাকে কতবার বকুনি খেতে হয়েছে। ঠাকুরমা বলতেন, অত যদি দরদ মেয়ের ওপর, নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চিকিচ্ছে-পত্ত্বর করাও গে। জামাইকে তো দিনরাত জপাচ্ছ, হুগলী থেকে ডাক্তার আনতে, পয়সা দেবে কে ? তোমার কি ? একটা মোটে মেয়ে, সস্তায় ঝেড়ে ফেলে দিয়েছ । আমার এখনও আইবুড়ো মেয়ে ঘরে, তোমার মেয়ের জন্যে তাকে তো আমি জলে ভাসিয়ে দিতে পারি না ? যে কটা টাকা আছে, তা এখন তুলে রেখে দিতে হবে ওর ঘর-বর দেখে দিতে ; এতে তোমার মেয়ের ভাগ্যে বাপু যা থাকে। দিদিমাকে কতদিন পুকুরঘাটের চাপাতলায় বসে এক হাপুস নয়নে কাদতে দেখেছি। এ রকম কতদিন যে কাটল ! কতদিন যে মায়ের ঘরে যেতে পারলুম না! মা দিন দিন যেন বিছানার সঙ্গে মিশে যেতে লাগলেন। মায়ের ঘরের দোর সর্বদাই বন্ধ। আমি জানলা দিয়ে উকি মেরে দেখতুম, মা এক ঘরের মধ্যে বিছানার অঘোর হয়ে অচৈতন্ত হয়ে শুয়ে। দিদিমা হয়তো মায়ের ছাড়া কাপড় নিয়ে কাচতে গিয়েছেন। আমি আস্তে আস্তে ডাকতুম, ও মা, মা ! তারপর দোর ঠেলে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করতুম। অমনি ছোটপিসীমা কোথা থেকে এসে আমায় ছো মেরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেন । —বাবা কি দস্তি ছেলে ! এক দণ্ড যদি চোখের আড় করবার জো আছে! ঘুরছেন সৰ্ব্বদা মার কাছে যাবার জন্তে । বারণ ক’রে দিইছি না তোমায় ? ঠাকুরমা চেচিয়ে বলে উঠতেন, দে আচ্ছা ক'রে দু ঘা কষিয়ে। পরের হোলা ঘায় বন পানে ধায় ; যতই কর, ছেলের সর্বদাই মা, মা আর মা ! বড়পিসীমা মাকে সত্যিকার ভালবাসতেন । র্তার বিয়ে হয়েছিল এই গায়েই । পিসেমশায়ের অবস্থা বোধ হয় ভাল ছিল না, বড়পিসীমাকে ভাল কাপড়-চোপড় পরতে দেখি নি কোনও দিন। ঠাকুরমার সঙ্গেও বোধ হয় তার তেমন ভাব ছিল না। তিনি কিন্তু মাঝে মাঝে এসে মায়ের কাছে বসে থাকতেন, দিদিম! বাদে তিনি আর বাবা ছাড়া মায়ের ঘরে আর কেউ চুকত না । বাবার কোন কথা বলবার যো ছিল না। মায়ের অসুখের সম্বন্ধে কিছু বললেই ঠাকুরমার সঙ্গে ঝগড়া বেধে যেত। একদিন সকালে উঠেই শুনলুম ঠাকুরমাতে আর বাবাতে তুমুল তর্ক চলছে । ঠাকুরমা বলছেন, চাম্ৰায়ণ প্রচিত্তির না করলে আমার বাড়িতে অকল্যের্ণ হবে । তোমার বউ তো এক নয়, আমার আরও লোকজন নিয়ে ঘরকন্না করতে হয় । পুরুতষ্ঠাকুর বলে গিয়েছেন, প্রাচিত্তির করাতে হবে এই একাদশীর দিন। বাবা বলছেন, বল কি মা ? ও কালও বলেছে, হ্যাগো আমি বঁচিব তো ? আমি বলেছি, কেন বাঁচবে না ? এবার ডাক্তার বলেছে, সেরে উঠবে। চান্দ্রায়ণের নাম শুনলেই ও ভয়ে খুন হয়ে যাবে। যার এখনও এত বাচবার ইচ্ছে, তাকে কি ক'রে প্রচিত্তির করানো যায় মা ? ও ত\ হ'লে ভক্ষে ম'রে যাৰে ।